বাংলাদেশে দেখি স্পেশাল নিড, মানসিক রোগী বা একটু আলাদা কাউকে দেখলেই হা করে তাকিয়ে থাকে মানুষ। তখন সমাজের সব নিয়ম যেন ভুলে যাই আমরা। আসলে নিয়ম মানি না, কারণ তাঁকে ছোট করে দেখি। ভাবি, এর ক্ষেত্রে সামাজিক নিয়ম মানার দরকার নেই। এই কারণে বাংলাদেশের তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা সাধারণত আগ্রাসী ভাব নিয়ে চলে যাতে তাঁদের কেউ ঘাটাতে না আসে, অনেকে ভয়ও পায়। এটা আসলে তাঁদের আত্মরক্ষার একটা উপায়। ‘পাগল’ দেখলে ঢিল ছুড়ে মারা, হাসাহাসি করাও আমাদের বাঙালি সমাজের এক নিষ্ঠুরতা ও অসভ্যতার লক্ষণ।
আমার মেয়ের ডাউন সিনড্রোম আছে, সে সাধারণ বাচ্চাদের থেকে আলাদা। কেউ এরকম ‘অভদ্রের’ মতো তার দিকে তাকিয়ে থাকলে সে বলে দেয়, ‘ডোন্ট লুক অ্যাট মাই ফেইস।’
সেরকমই একটা ঘটনা ঘটেছে কিছুদিন আগে ঢাকায়। অটিজম আছে এমন প্রাপ্তবয়স্ক এক ছেলের দিকে তার স্কুলের পাশের মেডিকেল কলেজের এক ছাত্রী এভাবে তাকিয়ে ছিল। ছেলেটি স্কুলের পোশাক পরা ও ব্যাগ কাঁধে ছিল। স্কুল যেহেতু কলেজটির পাশেই, মেয়েটি হয়তো বুঝতেও পেরেছিল যে, সে স্পেশাল-নিড। ছেলেটি প্রথমে বলেছিল, ‘তাকাবা না।’ এরপরও যখন মেয়েটি তাকিয়ে ছিল, ছেলেটি কাছে গিয়ে আরও জোরে বলেছে, ‘তাকাবা না।’ তখনই ভয় পেয়ে মেয়েটি দৌড় দিয়ে ওর কলেজে ঢুকে পড়ে। মেডিকেল কলেজের গার্ডরা কিছু না শুনেই মারধর শুরু করে ছেলেটিকে। শরীরের দিক দিয়ে বড়োসড়ো ছেলেটি কিছুই বুঝতে পারেনি। ভাগ্য ভালো ওর বাবা ছিলেন সাথে। ‘আমার ছেলে স্পেশাল নিড’ বলার পর তাঁদের কথা ছিল, ‘প্রতিবন্ধী তো কি হইছে, এমন ছেলে জন্ম দিছেন কেন?’ বাবা থাকায় বড় ক্ষতি হওয়ার আগেই ছেলেটি রক্ষা পেয়েছিল। সে ঘটনা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে প্রতিবাদ হচ্ছে, রেডিওতেও তার মা সাক্ষাৎকারও দিয়েছেন।
আমি ভাবছি ছেলেটি ও তার বাবা যদি দরিদ্র হতো, মলিন পোশাকের হতো তাহলে গার্ডের দল কিছুই শুনতো না, দুজনকেই হয়তো মারধর করত। এই ঘটনা কেউ জানতেও পারত না। আসলে অহরহ ঘটছেও এ রকম। যারা একই সঙ্গে দরিদ্র ও প্রতিবন্ধী, তাদের ওপর দ্বিগুণ অভিশাপ হয়ে আছে এ সমাজ।
আসুন আমরা সচেতন হই আর ছোটবেলা থেকেই আমাদের সন্তানদের শিখাই ভিন্নতা দেখলে ভয় না পেতে, তাকিয়ে না থাকতে, সমাজের সব ধরনের মানুষের সাথে মিশতে, যত্ন নিতে। একা সামনে এগিয়ে গেলেই অগ্রসর হওয়া যায় না, আসুন সবাইকে নিয়ে অগ্রসর হই। তাতে না হয় আপনার নিজের এগোনোর গতি একটু মন্থরই হলো।
ফয়জুন নাহার একজন অভিভাবক। [email protected]