২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন ফাঁকা রেখে ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত করতে দেখা গেছে। প্রতিবছর ফাঁকা আসন পূরণ না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেতো এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ বছর সময়-স্বল্পতাসহ নানা অজুহাতে আসন ফাঁকা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত রাখায় শিক্ষার্থীদের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে। কারণ অনেক শিক্ষার্থীর স্বপ্ন থাকে দেশের প্রথম সারির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একটি সিটের জন্য তুমুল প্রতিযোগিতা হয়। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সিট অর্জন করে নেয় মেধাবী শিক্ষার্থীরা। ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয় কয়েক লাখ শিক্ষার্থী। এত শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েও কেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফাঁকা আসন রয়ে গেল এবং কেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ফাঁকা আসন রেখেই ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত করল– তার কিছু কারণ যেমন রয়েছে, আবার সেগুলোর যথোপযুক্ত সমাধানও রয়েছে।
১. কারণ: ভর্তির জন্য শিক্ষার্থী না পাওয়া
সমাধান: গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে সকল শিক্ষার্থীর নম্বর বেশি তারা সব বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করে ভর্তির জন্য মনোনীত হয়েছে তাই যাদের নম্বর কম তারা প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়েই অপেক্ষমাণ তালিকায় রয়েছে। এ ক্ষেত্রে গণবিজ্ঞপ্তিতে ভর্তি নিলে কার্যক্রম দ্রুত শেষ করা যাবে।
২. কারণ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বা দুইবার ভাইবা কল করার পর ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত রাখা।
সমাধান: অনেক শিক্ষার্থী অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিষয় পেয়ে চলে আসে এবং সে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন ফাঁকা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি স্থগিত রাখায় আসন ফাঁকা হওয়ার সুযোগ রয়েই গেছে। তাই দ্রুত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফাঁকা আসনে ভর্তি নিলে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আসন ফাঁকা হওয়া মাত্রই ভর্তি কার্যক্রম দ্রুত শেষ করতে পারবে। ফলে অনেক শিক্ষার্থীর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন পূরণ হবে।
৩. কারণ: মিড টার্ম পরীক্ষার জন্য নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি করানোয় অনীহা
সমাধান: মিড টার্ম পরীক্ষা সাধারণত ১০-১৫ নম্বরের হয়ে থাকে। মিড টার্মের আদলে অ্যাসাইনমেন্ট আকারে মূল্যায়ন নিয়ে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি করানো যেতে পারে। যেহেতু ১ম বর্ষে এখনও পুরোদমে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস তেমন হয়নি তাই খুব সহজেই নতুন ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে।
৪. কারণ: আবাসন, হল, শিক্ষার মান বিবেচনায় আসন ফাঁকা রাখা।
সমাধান: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসন সংকটের কারণে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে অনীহা রয়ে গেছে। বিশেষ করে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রায় এক হাজার আসন কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে আসন ফাঁকা রাখায় ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েছে। ফাঁকা আসনের বিপরীতে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো উচিত কারণ যেসব শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে তাদের যোগ্যতা রয়েছে বলেই মেধার সাক্ষর রাখতে পেরেছে। উত্তীর্ণ মেধাবী শিক্ষার্থীদের ভর্তি করালে বিশ্ববিদ্যালয়েরই সুনাম সমুন্নত হবে ভবিষ্যতে। আবাসন সংকটের অজুহাতে আসন ফাঁকা রেখে ভর্তি স্থগিত রাখা কোনো সমাধান নয়।
সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক’ ও ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা ফাঁকা আসনে ভর্তি নেওয়ার জন্য আন্দোলন করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরাও ফাঁকা আসনে ভর্তি নেওয়ার দাবিতে নীলক্ষেত মোড় অবরোধ করেছিল। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধশতাধিক ফাঁকা আসনে ভর্তি নেওয়ার দাবিতে একক প্রতিবাদ করতেও দেখা গেছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েও শতাধিক ফাঁকা আসনে ভর্তি নেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে শিক্ষার্থীরা। জাতীয় কবি কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন ফাঁকা রেখেই ভর্তি বন্ধ করায় শিক্ষার্থীরা হতাশ।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন ফাঁকা রেখে ভর্তি স্থগিত করার প্রবণতা উচ্চশিক্ষায় ইতিবাচক বার্তা নয়। উচ্চশিক্ষায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা সংবিধানের ২৭ ও ২৮ অনুচ্ছেদের সাথে সাংঘর্ষিক। ইতিমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক’ ও ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা ফাঁকা আসনে ভর্তি নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আইনি নোটিশ পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। ফাঁকা আসনে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের অধিকার। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আন্তরিকতা হতে পারে শিক্ষার্থীদের স্বপ্নপূরণের সারথি।
তুরাগ হোসাইন
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থী
সাতমাথা, বগুড়া