বেসরকারি মেডিকেল কলেজ

বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো যতটাই নজিরবিহীন নিদায়ভাবে চলছে, সরকারও ততটাই নজিরবিহীন তাদের লাগামছাড়া চালচলন ছাড় দিয়ে চলেছে। এরই পরাকাষ্ঠা হয়েছে নজিরবিহীন আরও ১১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের অনুমোদন দেওয়া। এই সরকারের আমলে এ নিয়ে ২৪টি মেডিকেল কলেজের অনুমোদন মিলল।
এত কলেজ, এত শিক্ষার্থী এবং বিপুল ভর্তি ও শিক্ষাব্যয় সত্ত্বেও এগুলোর বেশির ভাগেই নেই যোগ্য ও পর্যাপ্ত শিক্ষক। অজস্র নেই-এর মধ্যে যা সবচেয়ে বেশি করে আছে তা হলো বাণিজ্য। চিকিৎসাবিদ্যার মতো জীবনের জন্য জরুরি বিষয়কে এভাবে হেলাফেলা করার খেসারত যে মানুষকে জীবন দিয়ে দিতে হতে পারে, সেই হুঁশ সরকারের নেই; এটা অতি আশ্চর্যকর! এসব অনুমোদনের পেছনে ঘুষ-দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি, দলপ্রীতি রয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা দরকার।
দেশে এখন চলছে ৫৪টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ। এসবে শিক্ষক-সংকট কতটা প্রকট, তা বোঝার জন্য একটি উদাহরণই যথেষ্ট। এমন কলেজও আছে যা চালাচ্ছেন মাত্র ১০ জন শিক্ষক। প্রথম আলোয় গতকাল মঙ্গলবারের সংবাদ থেকে জানা যাচ্ছে, গত বছর এসবের কোনো কোনোটির ঘোষিত ভর্তি ফি ছিল ১৬ লাখ টাকা। মাত্র ১০ নম্বর পেয়েও ভর্তি হতে পারার উদাহরণও আকছার পাওয়া যায়। এসবের মালিকেরা বিদ্যমান নিয়মনীতি ও আইনকানুনের পরোয়া করারও প্রয়োজন বোধ করেন না। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি ফি বেঁধে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হলেও অদ্যাবধি তা কার্যকর হয়নি।
গত ২২ ডিসেম্বর ‘বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি: ৬৫০ কোটি টাকার বাণিজ্য’ শিরোনামে প্রথম আলোয় প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি ও টিউশন ফি নির্ধারণে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশ দিলেও তার অগ্রগতি জানা যায়নি।
চিকিৎসাবিদ্যা শিক্ষায় এই মগের মুলুকের দশা এখনই ঠেকানো না গেলে অচিরেই দেশ ‘চিকিৎসক’ নামের একদল ‘অশিক্ষিত’ অপচিকিৎসকে ভরে যাবে। সরকার কি সেটাই চায়?