সংবাদপত্রবাহী গাড়িতে হামলা

হরতাল-অবরোধের অনিশ্চিত দিনপঞ্জির মধ্যেও দেশের গণমাধ্যম সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু অসুবিধা হচ্ছে সংবাদপত্র বিতরণ ও প্রেরণের বেলায়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ঐতিহ্যের মধ্যে হরতাল-অবরোধ-অসহযোগ অপরিচিত নয়। কিন্তু এখন এমন অনেক কিছুই ঘটছে, যা আগে খুব কম ক্ষেত্রেই ঘটেছে। সংবাদপত্র বিতরণে বাধা তার অন্যতম।
সাধারণত, সরকার বিভিন্নভাবে মতপ্রকাশে বাধা সৃষ্টি করে। কিন্তু এবার দেখা যাচ্ছে, বিরোধী দলের কর্মসূচির অন্যতম শিকার হচ্ছে সংবাদপত্র বহনকারী যানবাহন। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকেই প্রথম আলোসহ বেশ কটি জাতীয় পত্রিকার গাড়িতে হামলার খবর এসেছে। হামলা করা কিংবা গাড়ি থামিয়ে সংবাদপত্রের চালান কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। এতে কেবল পাঠকেরাই বঞ্চিত বা সংবাদপত্র প্রতিষ্ঠানই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না, সরাসরি আক্রান্ত হচ্ছে গণমাধ্যমের স্বাধীনতাও।
অতীতে যেকোনো সংঘাতমূলক রাজনৈতিক কর্মসূচির মধ্যেও মুদ্রিত সংবাদপত্র সারা দেশে পৌঁছাতে অসুবিধা হতো না। নিজস্ব পরিবহনব্যবস্থায় সংবাদপত্রের চিহ্ন-সংবলিত গাড়িকে পিকেটাররা বাধা দিতেন না। কিন্তু এবার সেটাও করা হচ্ছে। বাছবিচারহীনভাবে সংবাদপত্র বহনকারী গাড়ির গতি রোধ করা হচ্ছে, হামলা করা হচ্ছে। এতে ভীতসন্ত্রস্ত হচ্ছেন বিতরণকারীরা। এবং এভাবে গণমাধ্যমের ওপর চাপও সৃষ্টি হচ্ছে। ভাড়াটে পিকেটার ও সন্ত্রাসীরা যখন রাজনৈতিক বিক্ষোভের দায়িত্ব নিয়ে ফেলে, তখন এই ধারার ঘটনাই ঘটবার কথা। বিরোধী দলের জন্য এটা কেবল লজ্জাজনকই নয়, গণমাধ্যমের স্বাধীন ক্রিয়াকর্মের বিরুদ্ধে এক কলঙ্কিত নজির তারা সৃষ্টি করল। বিরোধীদলীয় নেতা বা দলের মুখপাত্র বারবার নিরীহ ব্যক্তি কিংবা জনগুরুত্বপূর্ণসেবায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানের কাজে বাধা না দেওয়ার কথা বললেও, কার্যত পরিস্থিতির ওপর তাঁদের নিয়ন্ত্রণ নেই। অথবা, তাঁরা কথার কথা হিসেবে এগুলো বলেন, কার্যত তা পালন করেন না।
আমরা সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবার কাছে আহ্বান জানাই, সংবাদপত্র বিতরণে বাধা পরিহার করুন। সরকারের উচিত সংবাদপত্রবাহী গাড়িগুলোকে পুলিশি পাহারায় গন্তব্যে পৌঁছাতে সাহায্য করা। কেবল বিরোধী দলের ওপর দোষারোপ না করে, সরকারেরও উচিত সড়কের নিরাপত্তা বিধানে আশু ব্যবস্থা নেওয়া।