পোশাক কারখানায় আগুনেরঘটনা

গত বুধবার রাতে মিরপুরের তুং হাই সোয়েটার কারখানায় আগুনে পুড়ে কারখানার মালিকসহ আটজনের মৃত্যুর ঘটনাটি অত্যন্ত মর্মান্তিক। সাভার ট্র্যাজেডিতে দেশের মানুষ যখন শোকে মুহ্যমান, তখনই ঘটল এ দুর্ঘটনা। ধারণা করা হচ্ছে, শর্টসার্কিট থেকে ভবনের তৃতীয় তলায় আগুন লাগে এবং দ্বিতীয় ও চতুর্থ তলায় ছড়িয়ে পড়ে। তৃতীয় তলায় প্রচুর সোয়েটার ও কাপড় মজুত ছিল। এ সময় কারখানার মালিক ও বিজিএমইএর পরিচালক মাহবুবুর রহমান কয়েকজন বন্ু্লকে নিয়ে দশম তলায় নিজের কক্ষে অবস্থান করছিলেন। আগুন লাগার খবর পেয়ে প্রথমে তাঁরা সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠার চেষ্টা করেন। কিন্তু ছাদে যাওয়ার চাবি না থাকায় ফিরে এসে তাঁরা নিচে নামতে গিয়ে ধোঁয়ার কুণ্ডলীতে শ্বাস রোধ হয়ে মারা যান।

এ আগুন লাগার ঘটনা তৈরি পোশাকসহ সব কারখানার নিরাপত্তাব্যবস্থার মারাত্মক ঘাটতির কথাই আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। তুং হাইয়ের অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা তাজরীনের মতো নাজুক না হলেও নিচতলায় কাপড় রাখা ছিল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। আর অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা যতই উন্নত হোক না কেন, সবাই প্রশিক্ষিত না হলে দুর্ঘটনা এড়ানো যাবে না। আগুনের সময় নিচে নামা ঝুঁকিপূর্ণ—এ কথা জানা থাকলে হয়তো তাঁরা নিশ্চয়ই নিচে নামতেন না এবং প্রাণে বেঁচে যেতেন।

‘সাধারণভাবে ভবনের বিদ্যুৎ সরবরাহব্যবস্থা নিয়ে মালিকেরা খুব একটা মাথা ঘামান না’—অগ্নিনির্বাপণ বিভাগের কর্মকর্তার এ অভিযোগ সত্য হলে সেটি খুবই চিন্তার বিষয়। মালিক-শ্রমিক-কর্মচারীনির্বিশেষে অগ্নিনির্বাপণের প্রশিক্ষণ নেওয়া জরুরি। অনেক কারখানায়ই অগ্নিনির্বাপণকর্মীদের সার্বক্ষণিক রাখা হয় না। সামান্য টাকা সাশ্রয়ের জন্য মালিকেরা কেন এভাবে দুর্ঘটনাকে সাদরে আমন্ত্রণ জানান? কেনই বা নিজেদের ও শ্রমিকদের বারবার মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেন?

এখন থেকে সব কারখানায় নিরাপত্তার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সজাগ হতে হবে। অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থাসহ সব ধরনের নিরাপত্তারক্ষী রাখতে হবে ২৪ ঘণ্টার জন্যই। কারখানাকে কেবল মুনাফা অর্জনের হাতিয়ার হিসেবে না দেখে অন্তত নিজেদের নিরাপত্তার জন্যও মালিকেরা আরেকটু সজাগ ও সতর্ক হতে পারেন।