পরিস্থিতি এখনো উদ্বেগজনক

হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও উপাসনালয়ে হামলা পুরোপুরি বন্ধ হয়েছে বলা যাবে না। নাসিরনগরে সংঘবদ্ধ আক্রমণের পর বরিশাল, ঠাকুরগাঁও, যশোর, সিলেট, ফেনী, নওগাঁ, মানিকগঞ্জ, নেত্রকোনা, ফরিদপুর, মাগুরাসহ বেশ কয়েকটি স্থানে হামলার ঘটনা ঘটেছে। যদিও এর মাত্রা নাসিরনগরের মতো নয়। গতকাল বুধবার ফরিদপুরের বালিয়াকান্দিতে একটি মন্দিরে হামলা হয়েছে। বোঝা যায়, এসব হামলার উদ্দেশ্য হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করা। পরিস্থিতি এখনো উদ্বেগজনক।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের ঘটনার নয় দিন পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এলাকা পরিদর্শন এবং প্রশাসনের উদ্যোগে শান্তি সমাবেশে তাঁর অভয়বাণী হিন্দু সম্প্রদায়কে কতটা আশ্বস্ত করবে, সেটি ভবিষ্যৎই বলতে পারে। তবে ভরসা পাওয়ার মতো এখনো কিছু ঘটেনি বলেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘হামলাকারীরা চিহ্নিত হয়েছেন এবং কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’ কিন্তু ইতিমধ্যে কেউ কেউ ছাড় পেয়ে গেছেন বা যাচ্ছেন বলে জনমনে ধারণা জন্মেছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের তিন নেতার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হলেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। ক্ষমতাসীন দলের কারও কারও বক্তব্যে প্রতীয়মান হয় যে সরকারি দলের লোকেরা সব সাধু-সজ্জন। হামলার পেছনে যে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ বিরোধ নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে, তা একাধিক তদন্ত প্রতিবেদনেও উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু দলীয় লোকদের বাঁচাতে উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা সত্য উদ্ঘাটনের যেমন অন্তরায়, তেমনি অপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রে বড় বাধা বলে মনে করি।
রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির ঊর্ধ্বে উঠেই হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও অপরাধীদের বিচার হতে হবে। আক্রান্ত মানুষগুলোর অভিযোগ আমলে না নিয়ে গয়রহ মামলা কিংবা গ্রেপ্তার কোনো কাজে আসবে না। এসব হামলার পেছনে কোথাও ভোটের সমীকরণ, কোথাওবা জমি ও বাড়িঘর গ্রাস করাই মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে।
এ অবস্থায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে আশা ও আস্থা ফিরিয়ে আনতে একের পর এক হামলার ঘটনা বন্ধে অবিলম্বে প্রশাসনকে কার্যকর ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। ঘটনার পেছনে না ছুটে ঘটনা ঘটার আগেই দুর্বৃত্তদের নিবৃত্ত করতে হবে। একই সঙ্গে সামাজিক সংহতি ও সম্প্রীতি রক্ষায় সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের সচেতন অংশকে আরও বলিষ্ঠভাবে এগিয়ে আসতে হবে।