কুমিরের বাচ্চা হত্যা

সুন্দরবনের কাছে রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন নিয়ে যখন বিতর্ক চলছে, তখন সেই সুন্দরবনের করমজলে স্থাপিত কুমির প্রজনন কেন্দ্র থেকে ৪৩টি কুমিরের বাচ্চা নিখোঁজ হওয়া ও ২৫টি বাচ্চা মারা যাওয়া অত্যন্ত অমার্জনীয় ঘটনা। প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, প্রজনন কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কর্মী মাহবুবের কথা-কাটাকাটির জের ধরে এ ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যদি অধস্তন কর্মীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে থাকেন, সে জন্য কুমিরের বাচ্চাগুলোকে মেরে ফেলা হবে কেন? এ কেমন বর্বরতা?
একটি সূত্রের মতে, কুমিরের বাচ্চাগুলো মেরে ফেলা হয়েছে। এই কেন্দ্রের কৃত্রিম পুকুর থেকে গত রোববার ১৯টি কুমিরের বাচ্চার খণ্ডিত দেহাবশেষ উদ্ধার করা হয়েছে। এর আগে চারটি মৃতদেহ ও তিনটির দেহের অংশবিশেষ পাওয়া যায়। অপর সূত্রের দাবি, বাকি কুমিরের বাচ্চাগুলোকে পাচার করা হয়েছে। কুমিরের বাচ্চা হত্যা বা পাচার—দুটোই গুরুতর অপরাধ। প্রাথমিক তদন্তে এক বনপ্রহরী মাহবুবের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ায় তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। দেখার বিষয়, অপকর্মটি তিনি একাই করেছেন, নাকি তাঁর সঙ্গে আরও কেউ কেউ জড়িত ছিলেন?
কৃত্রিম পুকুর থেকে গত রোববার ১৯টি কুমিরের বাচ্চার খণ্ডিত দেহাবশেষ উদ্ধারের পর বন বিভাগ এখন বলছে বাচ্চাগুলো হয়তো কোনো হিংস্র প্রাণীর আক্রমণে মারা পড়েছে। এ ধরনের দাবির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। বিলুপ্তপ্রায় লবণ পানি প্রজাতির কুমিরের প্রজনন বৃদ্ধি ও লালনপালনের জন্য ২০০২ সালে পূর্ব সুন্দরবনের করমজল পর্যটনকেন্দ্রে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ প্রকল্প নেওয়া হয়। প্রকল্পের আওতায় ৩২ লাখ টাকায় ৮ একর জায়গার ওপর বন বিভাগের উদ্যোগে এ কুমির প্রজনন কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছিল। ২০০৫ সাল থেকে বর্তমান বছর পর্যন্ত জুলিয়েট ও পিলপিল থেকে এ কেন্দ্র মোট ৭২৩টি ডিম থেকে ৪৬৫ বাচ্চা পেয়েছিল। সেই প্রজনন কেন্দ্রটির আজ এই দশা।
নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-বিরোধ নাকি অন্য কোনো কারণে কুমিরের ছানাগুলো বর্বরতার শিকার হয়েছে, তা তদন্ত করে খুঁজে বের করতে হবে। কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এই ঘটনাকে যাতে কোনোভাবেই ধামাচাপা দেওয়া না হয়, সে ব্যাপারে আমরা বন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।