২৯ ডিসেম্বর

কাল ২৯ ডিসেম্বর ‘প্রতিরোধ’ বনাম ‘প্রতিহত’ কর্মসূচি জনমনে বড় ধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। ৫ জানুয়ারির জবরদস্তির নির্বাচন ইতিমধ্যে দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। অন্যদিকে বিরোধী দল সেই নির্বাচন ঠেকাতে সারা দেশের মানুষকে ঢাকায় আসতে বলে পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তুলেছে। কেননা, বিরোধী দল যে ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ পালন করছে, সেটাও পেশিশক্তিনির্ভর; সেখানে গণতান্ত্রিক রীতিনীতির সম্পর্ক আলগা। দুই পক্ষের এই রণপ্রস্তুতিতে বাংলাদেশ হঠাৎ মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত। এর দায় রাজনৈতিক নেতৃত্বকেই নিতে হবে।
বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়া তাঁর সর্বশেষ বিবৃতিতে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনকে ‘নিয়ম রক্ষার’ নির্বাচন হিসেবে চিহ্নিত করেন। অথচ সংবিধানের প্রাণবায়ু বের করে দিয়ে তিনি সেদিন সংবিধানের নামে ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার জেদ ধরেছিলেন। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে যাচ্ছে বলেই বিশ্লেষকেরা মনে করেন। তবে এবারে মূল্য আরও চড়া।
মহাকালের গর্ভে এ বছরটি বিলীন হওয়ার আগেই রাজনৈতিক সহিংসতায় ৪৯২ জন নিহত হয়েছে। সত্যি বলতে কি, এটা মূলত নির্বাচনী বলি। ৩০০ সংসদীয় আসনের প্রতিটিতে গড়ে একটির বেশি বলি ইতিহাসে জমা পড়েছে। এত মৃত্যু ও ধ্বংসযজ্ঞের বিভীষিকার কারণে মানবিক রাজনীতি নির্বাসিত, দানবিকতাই পুনর্বাসিত। এই প্রেক্ষাপটে ২৯ ডিসেম্বরকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের পরস্পরবিরোধী ঘোষণা দেশের মানুষকে বিচলিত ও ভীতসন্ত্রস্ত করে তুলেছে। সাধারণ মানুষ অসহায় ও কিংকর্তব্যবিমূঢ়। এ অবস্থা আরও চলতে থাকলে বাংলাদেশ প্রকৃতই ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হবে।
শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করা গণতান্ত্রিক অধিকার। এটা মেনেই সরকার সম্ভাব্য নাশকতার আশঙ্কায় যুক্তিসংগত প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে। কিন্তু বিরোধী দল নিগ্রহে ক্ষমতাসীনদের স্বৈরতান্ত্রিক আচরণ অবশ্যই পরিত্যাজ্য। ২৯ ডিসেম্বরের কর্মসূচি ঘোষণা করতে গিয়ে বিরোধীদলীয় নেতা ছিয়ানব্বইয়ের মডেলে দশম সংসদ মেনে নেওয়ার প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন। এর মাধ্যমে তাঁরা সমঝোতার পথ খোলা রাখলেও সরকারি দলের পক্ষ থেকে ইতিবাচক সাড়া না দেওয়া দুর্ভাগ্যজনক। ক্ষমতাসীনেরা সংবিধান রক্ষার জন্য ৫ জানুয়ারি নির্বাচন করার কথা বললেও মানুষের জানমাল রক্ষায় তারা কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। সব অঘটনের দায় বিরোধী দলের ওপর চাপিয়ে পার পাওয়া যাবে না। দেশে শান্তি, স্থিতি ও জনজীবনের নিরাপত্তার জন্য সমঝোতার বিকল্প নেই।
অন্যদিকে এটাও লক্ষণীয়, যদিও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রশ্নে কোনো দর-কষাকষি চলে না, তদুপরি এটা অপ্রিয় সত্য যে সরকারি দল বিএনপির বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের বিচার নস্যাতের গ্রহণযোগ্য অভিযোগ তুলেছে। জামায়াতের বিরুদ্ধেও নাশকতার নির্দিষ্ট অভিযোগ আছে। এটা আওয়ামী লীগের ‘দলীয়’ দাবি বিবেচনায় নিয়েও বিএনপি এ বিষয়ে নির্বিকার থাকতে পারে না।
আমরা আশা করব, ২৯ ডিসেম্বরের কর্মসূচির বিষয়ে উভয় পক্ষ সর্বোচ্চ সংযম ও সহিষ্ণুতার পরিচয় দেবে। জবরদস্তি নির্বাচন ও জবরদস্তি অভিযাত্রা—দুটোই অগণতান্ত্রিক। জনগণের উচিত উভয়কেই ‘না’ বলা।