গবেষণার সাফল্য ও আমাদের কথা

এখন আসি পাটের জিনোম সিকুয়েন্সিং প্রজেক্টের প্রসঙ্গে। কায়কোবাদ স্যার লিখেছেন, ৮০ কোটি টাকার প্রজেক্টের ফলাফল ৪ দশমিক শূন্য ৭ ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টরে প্রকাশিত একটি মাত্র পেপার। এই প্রজেক্টের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের সঠিক ব্যবহার নিয়েও তিনি বেশ সংশয় প্রকাশ করেছেন। কিন্তু ৪ দশমিক শূন্য ৭-এ প্রকাশিত পেপারটি কিন্তু পাটের জীবনরহস্য উন্মোচনের ওপরে নয়, এটা ছিল অনেকটা প্রজেক্টের বাই-প্রডাক্ট। স্পষ্ট করে বলতে গেলে এটা ছিল পাটের একটা ক্ষতিকর ছত্রাকের জীবনরহস্য উন্মোচনের ওপরে। পাটের জিনোম সিকুয়েন্সিংয়ের পেপারটি এখনো প্রকাশিত হয়নি,  আশা করা যায়, পাটের জীবনরহস্য উন্মোচনের মূল পেপারটিও কোনো ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টরের জার্নালে প্রকাশিত হবে। জীবনরহস্য উন্মোচনের যে প্রক্রিয়া, তা আসলে বেশ জটিল। জীববিজ্ঞানের কোনো প্রজাতির পুরো পরিধিকে একটা ছকে ফেলতে চাইলে শুধু সিকুয়েন্সিংয়ের ফলাফল পর্যাপ্ত নয়, সঙ্গে আরও অনেক প্রাসঙ্গিক ব্যাপার আছে, যার কাজ এখন প্রফেসর মাকসুদুল আলমের পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশ পাট গবেষণাকেন্দ্রে চলছে।

কায়কোবাদ স্যার তাঁর লেখায় পাটের জিনোম সিকুয়েন্সিংয়ের পরবর্তী আশাবাদ নিয়ে বেশ হতাশা ব্যক্ত করেছেন। তিনি হয়তো বা আশা করছিলেন খুব তাড়াতাড়ি নতুন নতুন উন্নত প্রজাতি উদ্ভাবিত হবে, যা আমাদের পাটের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনবে এবং আমাদের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। প্রসঙ্গত, আমরা আমাদের ল্যাবের কার্যক্রমের একটা ছক দিয়ে উন্নত প্রজাতি উদ্ভাবনের প্রক্রিয়াটা ব্যাখ্যা করছি। আমাদের ল্যাব প্রধানত লবণ ও খরাসহিষ্ণু অধিক ফলনশীল নতুন ধান প্রজাতি উদ্ভাবনের ওপর কাজ করছে। এই কাজের ব্যাপ্তি এবং প্রকাশনা আমাদের ল্যাব ওয়েবসাইটে (www.pbtlabdu.net) পাওয়া যাবে। সাধারণত, একেকটা নতুন প্রজাতি উদ্ভাবন খুব সময়সাপেক্ষ ব্যাপার, যা অনেকাংশে নির্ভর করে তার পূর্ববর্তী প্রজাতির জীবনকালের ওপর। একটা প্রজাতি উদ্ভাবন তার কয়েকটা জেনারেশন (আনুমানিক ৬) পর্যন্ত মনিটর করা হয়, শুধু বিশেষভাবে নির্মিত নেট হাউসে, যা পরবর্তী সময়ে মাঠে লাগিয়ে তার কার্যক্ষমতা যাচাই-বাছাই করে তবে তা কৃষকদের হাতে পৌঁছানো হয়। প্রতিটি প্রজন্মের নিবিড় পর্যবেক্ষণ দরকার পড়ে কারণ, প্রতিটি প্রজন্মে কাঙ্ক্ষিত চরিত্রের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে পারলেই তবে সফলভাবে উন্নত প্রজাতি উদ্ভাবন করা সম্ভব। অর্থাৎ এই পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সাধারণভাবে পাঁচ থেকে আট বছর সময় দরকার।

পৃথিবীর সব দেশেই এই নিয়ম অনুসরণ করার মাধ্যমে নতুন প্রজাতি উদ্ভাবন করা হয়। সুতরাং, পাটের জীবনরহস্য প্রজেক্টই যেখানে এখনো প্রক্রিয়াধীন, সেখানে পরবর্তী আশাবাদ এভাবে গুঁড়িয়ে দেওয়া আসলে কি উচিত?

কায়কোবাদ স্যার তাঁর লেখায় আমরা যারা গবেষণা করি, তাদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে যথার্থ বলেছেন। এ প্রসঙ্গে তাঁর দেওয়া সাজেশনগুলো কাজে লাগানো যেতে পারে। যেমন তিনি দক্ষ গবেষকদের ডেটাবেইস তৈরি এবং নিয়মিত আপডেট করার তাগিদ দিয়েছেন, যা খুবই সময়োপযোগী মতামত। গবেষণার অর্থবরাদ্দের জন্য বিভিন্ন জটিলতা নিরসনে তাঁর স্পষ্ট অবস্থান আসলে আমাদের সামনে এগোনোর সাহস জোগাবে।

জেবা ইসলাম সেরাজ: প্রধান গবেষক, প্ল্যান্ট বায়োটেকনোলজি ল্যাব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

সামসাদ রাজ্জাক, মাহজাবিন আমিন, তাসলিমা হক, সাবরিনা এম ইলিয়াস, সুদীপ বিশ্বাস, শাবনাম জামান: গবেষক সহযোগী, প্ল্যান্ট বায়োটেকনোলজি ল্যাব, ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়।