নিয়োগে 'উপাচার্য মডেল'

উপাচার্য মহোদয় কেবল আইনকানুন ভেঙে ছাত্রলীগের ১২ জন নেতাকে নিয়োগই দেননি, ছাত্রলীগ করাকে নিয়োগের প্রায় পূর্বশর্ত হিসেবে হাজির করেছেন। তাঁর  ভাষায়, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ ছাত্র বা চাকরিপ্রার্থী বলতে কিছু নেই। এখানে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাই চাকরি পাবেন। এটাই তাঁদের বিশেষ যোগ্যতা।’ উপাচার্য পদে আসীন ব্যক্তি কীভাবে এ ধরনের কথা বলতে পারেন?

গতকাল ‘বিশেষ কর্মকর্তা পদে ছাত্রলীগের ১২ জন’ শিরোনামে প্রথমআলোর খবরে যেসব তথ্য আছে, তা যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য লজ্জাজনক। বিশেষ কর্মকর্তা পদে চাকরির জন্য প্রার্থীদের কাছ থেকে ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতারা উৎকোচ নিয়েছেন বলে অভিযোগ আছে। প্রার্থীরা হয় চাকরি অথবা উৎকোচের অর্থ ফেরত দেওয়ার দাবি করলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতারা উপাচার্যকে এই বলে চাপ দেন যে তাঁদের তালিকা অনুযায়ী চাকরি না দিলে তাঁরা তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদের নিয়োগের বিরোধিতা করবেন। এরপর উপাচার্য সিন্ডিকেটের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগ মুহূর্তে তিনি ১২ জনকে নিয়োগ দেন। এর অর্থ দাঁড়ায়, দ্বিতীয় মেয়াদে নিয়োগ পাওয়া নির্বিঘ্ন করতে উপাচার্য মহোদয় ছাত্রলীগের তালিকা অনুযায়ী ১২ জনকে এই নিয়োগ দেন, যাঁরা লোকদেখানো পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হতে পারেননি। এর আগের উপাচার্যও ছাত্রলীগের ৩১ জন নেতা–কর্মীকে বিশেষ কর্মকর্তা পদে নিয়োগ দিয়েছিলেন।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের অঘটনের খবর কারও অজানা নয়। ২০১২ সালে বিরোধী দলের আন্দোলনের সময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বিশ্বজিৎ নামের একজন দর্জিশ্রমিককে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের হল উদ্ধার ও বর্ধিত বেতন-ফি বিরোধী আন্দোলনেও সংগঠনটি কেবল সতীর্থদের ওপর চড়াও হয়েছে তা–ই নয়, শিক্ষকদেরও লাঞ্ছিত করেছে। সেই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও চাকরি দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়টির অধোগতিরই প্রমাণ দেয়। উপাচার্যের হাত যত লম্বাই হোক, তিনি এই কাজ করতে পারেন না। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ যোগ্যতায় দেওয়া এসব নিয়োগ বাতিল করা হোক। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।