পাবনা চিনিকল

এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে চিনি উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় আখের অভাবে। এই চিনিকল ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল এই কারণে যে, পাবনা অঞ্চলের চাষিরা প্রচুর আখ চাষ করতেন। প্রথম দিকে এটি লাভজনক হয়েছিল। কিন্তু এখন এই চিনিকল চালাতে প্রতিবছর ৩৭ কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়। কারণ, চাষিরা এখন আখের বদলে নানা জাতের সবজি ও ফলের চাষ করেন। চিনিকলটির বার্ষিক উৎপাদনক্ষমতা ১৫ হাজার মেট্রিক টন, কিন্তু আখের অভাবে গত বছর উৎপাদিত হয়েছে মাত্র ২ হাজার ১৪৬ মেট্রিক টন। কিন্তু স্থায়ী ও মৌসুমি মিলিয়ে এই চিনিকলের শ্রমিক-কর্মচারীর সংখ্যা মোট ৮৭২। শুধু তাঁদের বেতন দিতেই মাসে ৯০ লাখ টাকার বেশি ব্যয় হয়। অন্যান্য ব্যয় মিলিয়ে চিনির উৎপাদন ব্যয় দাঁড়ায় অত্যধিক।

সুতরাং, বর্তমান অবস্থায় এই চিনিকল আর চলতে পারে না। একে চালু রাখতে হলে ব্যাপকভাবে উৎপাদন বাড়াতে হবে। সে জন্য যে পরিমাণ আখের প্রয়োজন, তা চাষ করতে প্রয়োজন হবে ১২ হাজার থেকে ১৫ হাজার একর জমি। কিন্তু চাষিদের আখচাষ কমতে কমতে এখন প্রায় সাড়ে তিন হাজার একরে নেমে এসেছে। আখ যেহেতু সারা বছরের ফসল, তাই তা চাষ করা আর মোটেও লাভজনক নয়। সুতরাং, চাষিদের আখ চাষে উৎসাহিত করার কোনো সুযোগ নেই।

এটা পরিষ্কার যে শুধু আখের ওপর নির্ভর করে পাবনা চিনিকল আর চালানো যাবে না। চিনি উৎপাদনের বিকল্প উৎস অন্বেষণ করতে হবে। তা ছাড়া কারখানাটির বিদ্যমান স্থাপনা বহুমুখী কাজে ব্যবহার করা যায় কি না, তা-ও ভেবে দেখা যেতে পারে। যেমন কারখানার দুটি বয়লারের সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে জাতীয় গ্রিডে দেওয়া যেতে পারে, বিদেশ থেকে আমদানি করা অপরিশোধিত চিনি পরিশোধনও করা যেতে পারে।

মোট কথা, পাবনা চিনিকল নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। এভাবে আর চলবে না।