রোজাদারের জন্য খুশি ইফতারের সময়

ইফতারে সবার পছন্দ খেজুর। ছবি: প্রথম আলো
ইফতারে সবার পছন্দ খেজুর। ছবি: প্রথম আলো

সাহরি শব্দটি আরবি সাহর থেকে উদ্ভূত। সাহর শব্দের অর্থ হলো রাতের শেষাংশ বা ভোর রাত। আর সাহরি অর্থ হলো মুসলমানরা রোজা পালনের উদ্দেশ্যে শেষ রাতে ফজরের সময়ের আগে যে আহার করে থাকেন। রমজানের রোজার উদ্দেশ্যে শেষ রাতে সাহরি খাওয়া সুন্নত। ইসলামি আইনশাস্ত্রের দৃষ্টিতে সুন্নত হলেও প্রকৃত তাকওয়া অর্জন এবং আধ্যাত্মিক উন্নয়নের জন্য এর গুরুত্ব ও ফজিলত অপরিসীম। কারণ, সহিহ বুখারি শরিফ এবং মুসলিম শরিফের হাদিসে বর্ণিত, রাসুলে কারিম (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা সাহরি খাও; নিশ্চয় সাহরি খাওয়ার মধ্যে বরকত নিহিত আছে।’ হজরত আমর ইব্নুল আস (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আমাদের (মুসলমানদের) রোজা আর অন্যদের রোজার মধ্যে পার্থক্য হলো সাহরি খাওয়া আর না খাওয়া।’
সুবহে সাদিকের পূর্বের সময়টাকে সাহরি বলা হয়। সাহরির সময় হলো রাতের শেষ তৃতীয়াংশ। সাহরি নিরাপদ সময়সীমার মধ্যে পানাহার করলে নবীজির সুন্নত আদায় হয় এবং রোজা রাখাও সহজ হয়।
বরকত ইহকাল এবং পরকাল উভয়ের জন্যই সাহরি বরকতসমূহের বিভিন্ন দিক হতে পারে। সুন্নতের অনুসরণ। ইবাদতের জন্য শক্তি এবং তাকওয়া অর্জন, স্বাস্থ্য ও মনের অধিক প্রফুল্লতা লাভ, ক্ষুধার তাড়নায় সৃষ্ট প্রবৃত্তির কামনা নিবারণ। যারা একত্রে বসে সাহরি খায়, তাদের প্রতি সৌহার্দ্যের বরকত অবতরণ, সাহরির সময় দোয়া কবুলেরও সময়; এ সময় অধিক জিকির, তাহাজ্জুদ আদায় ও দোয়া মোনাজাতের সুযোগ লাভ ইত্যাদি।
এ ছাড়া সাহরি খাওয়া সমস্ত দিন রোজা রাখার জন্য অত্যন্ত সহায়ক। সাহরির সময় জাগ্রত হওয়া রোজার প্রতি আগ্রহের যথেষ্ট প্রমাণও বটে। সাহরির সময় আরামের নিদ্রা বর্জন করে জাগ্রত হওয়া প্রকৃতপক্ষে এক প্রকারের ইবাদত। এতে শেষ রাতে জাগ্রত হওয়ার অভ্যাস হয়, তাহাজ্জুদ আদায়ের সুযোগ হয়। সাহরির সময় জাগ্রত হওয়া এক প্রকারের মুজাহাদা বা সাধনাও বটে। এই সময় আল্লাহর রহমত নািজলের সময়, অগণিত আল্লাহপ্রেমিকের ফরিয়াদের সময়, আল্লাহর নৈকট্য বা মারেফাত লাভের সর্বাপেক্ষা উত্তম সময়। যারা এই বরকতের সময় জাগ্রত হয়ে আল্লাহর মহান দরবারে মোনাজাত করে থাকেন এবং ইস্তিগফার করেন, আল্লাহ তাঁদের ভালোবাসেন। তারা (ইমানদারগণ) রাত্রির শেষ অংশে আল্লাহর নিকট ইস্তিগফার করে থাকে। (সুরা যারিয়াত, আয়াত: ১৮)।
কোনো কারণে সাহরি খাওয়া সম্ভব না হলেও রোজা রাখতে হবে, কোনো প্রকার বাহানা বা ওজর রোজা ছাড়ার জন্য গ্রহণযোগ্য নয়। ইচ্ছাকৃতভাবে সাহরি বর্জন করা ঠিক নয়। কারণ, সাহরি খাওয়া সুন্নত।

ইফতারের গুরুত্ব ও ফজিলত
ইফতারের সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করা উত্তম। ইফতারের কিছুক্ষণ পূর্বেই ইফতার সামনে নিয়ে অপেক্ষা করা এবং যথাসময়ে ইফতার করা সুন্নত। এ ছাড়া ইফতার সামনে নিয়ে যে দোয়া করা হয়, সেই দোয়া আল্লাহর মহান দরবারে গুরুত্বের সঙ্গে কবুল হয় বলে হাদিস শরিফে উল্লেখ রয়েছে।
এ ছাড়া অপর একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রোজাদারের দোয়া আল্লাহর নিকট এতই গুরুত্বপূর্ণ যে তিনি রমজানের সময় আরশ বহনকারী ফেরেশতাদের উদ্দেশে ঘোষণা করেন, ‘রমজানে তোমাদের পূর্বের দায়িত্ব মওকুফ করা হলো, এবং নতুন দায়িত্বের আদেশ করা হলো, তা হলো আমার রোজাদার বান্দাগণ যখন কোনো দোয়া মোনাজাত করবে, তখন তোমরা আমিন! আমিন!! বলতে থাকবে।’ এই হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় আরশ বহন করার দায়িত্ব পালনের চেয়েও রোজাদারের দোয়ার সঙ্গে আমিন! আমিন!! বলা আল্লাহর কাছে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। তাই ইফতারের সময়সহ রমজানের দিনে ও রাতে অধিক পরিমাণে দোয়া মোনাজাত করা অনেক সওয়াব ও সৌভাগ্যের বিষয়।
ইফতারের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে আল্লাহ বলেন, ‘আমার নিকট সর্বাধিক প্রিয় ওই বান্দাগণ, যারা কালবিলম্ব না করে ইফতার করে।’
মহানবী (সা.) আরও বলেছেন, ‘রোজাদারের জন্য দুটি খুশি। একটি ইফতারের সময়, অপরটি আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের সময়’। কাজেই ইফতারের গুরুত্ব ও ফজিলত অপরিসীম।
যেকোনো হালাল খাদ্য বস্তু এমনকি শুধু পানি দিয়েও ইফতার করা যায়। মাগরিবের নামাজের পূর্বে ইফতার করা মুস্তাহাব বা উত্তম। ইফতারের সময় দোয়া পড়া সুন্নত। ‘হে আল্লাহ্! আপনার জন্য আমি রোজা রেখেছি, আপনার রিজিক দ্বারা ইফতার করছি।’
যে ব্যক্তি রোজাদারকে ইফতার করাবে, তার গুনাহ মাফ হয়ে যাবে, সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করবে। ওই রোজাদারের সওয়াবের সমপরিমাণ সওয়াব সে লাভ করবে। তবে ওই রোজাদারের সওয়াব কম হবে না। যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে তৃপ্তিসহকারে ইফতার (আহার) করাবে, আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করার পূর্ব পর্যন্ত তৃষ্ণার্ত করবেন না।
অধ্যাপক মাওলানা হাফেজ মো. হাফিজুর রহমান: খতিব, গুলশান জামে মসজিদ গুলশান, ঢাকা।