সন্ত্রাস দমনে সফল হবেন ম্যাখোঁ?

ইমানুয়েল ম্যাখোঁ
ইমানুয়েল ম্যাখোঁ

নেপোলিয়নের পর এ পর্যন্ত ফ্রান্সের সবচেয়ে কনিষ্ঠ প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ। মাত্র ৩৯ বছর বয়সেই দেশ শাসন করছেন তিনি। ফ্রান্সের সাবেক অর্থমন্ত্রী ছিলেন ম্যাখোঁ। তাই অর্থনৈতিক সংস্কারের দিকেই তাঁর নজর বেশি। পড়তি অর্থনীতি নিয়ে উদ্বিগ্ন ফ্রান্সবাসীর প্রত্যাশাও ছিল তাই।

তবে, সেই প্রত্যাশা পূরণের পথে কতটা এগিয়েছেন ম্যাখোঁ? নির্বাচনী প্রচারে তিনি বারবার বলেছেন ফ্রান্সের অর্থনীতি চাঙা করার কথা। ক্ষমতায় আসার পর কথা রেখেছেন তিনি। শ্রম আইন সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছেন। তবে পথটা সুগম হয়নি। অর্থনৈতিক সংস্কারে পথচলার শুরুতেই বাধার মুখে পড়েছেন। শুরু হয়েছে বিতর্ক। এমনকি শ্রম আইন পাস হলে আগামী সেপ্টেম্বর মাসে হরতাল করারও হুমকি দিয়েছে বিরোধীরা। 

শ্রম আইন সংস্কারে ম্যাখোঁর নতুন কর্মসূচির লক্ষ্য ফ্রান্সের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি গতিশীল করা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি। ম্যাখোঁ বলছেন, এই কর্মসূচিতে প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মপরিবেশ নিয়ে আরও জবাবদিহির সুযোগ পাবে।

ম্যাখোঁর নতুন আর্থিক সংস্কার সব প্রতিষ্ঠানের জন্য ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেছেন ফ্রান্সের শ্রমনীতি-বিষয়ক আইনজীবী এরিক কোহেন। আর্থিক সংস্কারের তিনটি নীতি রয়েছে বলে তিনি জানান। সেগুলো হলো বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করা, আইনি জটিলতা এড়াতে চাকরিদাতাদের উদ্বেগ কমানো, বেকারত্ববিষয়ক সমস্যা দূর করতে ট্রাইব্যুনাল গঠন করা। ম্যাখোঁর সরকার মনে করছে, শ্রম আইন সংস্কারের ফলে ২০২২ সালে ফ্রান্সে বেকারত্বের হার ৭ শতাংশ কমবে। দেশটিতে এখন বেকারত্বের হার ১০ শতাংশ।

ম্যাখোঁর আর্থিক সংস্কারের প্রতিবাদে কট্টরপন্থী জেনারেল কনফেডারেশন অব লেবার (সিজিটি) সেপ্টেম্বর মাসে হরতালের পরিকল্পনা করেছে। শ্রম আইন নিয়ে কাজ করছেন আইনজীবী জুডিথ ক্রিভিন। তিনি বলেন, এই সংস্কার হলে চাকরিজীবীদের পক্ষে চাকরিদাতাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।

এর মধ্যেই ম্যাখোঁর সরকার শ্রমনীতি সংস্কারের প্রস্তাব নিয়ে বিভিন্ন শ্রমিক ইউনিয়নের সঙ্গে বৈঠক করছে। পার্লামেন্টে ঐকমত্যে পৌঁছানোর প্রক্রিয়া দীর্ঘমেয়াদি। স্বল্পসময়ে এবং সহজে শ্রমনীতি সংস্কার চান ম্যাখোঁ। তাই বিশেষ আইনে পার্লামেন্টে শ্রম আইন পাস করতে চাইছেন। এখানেই বিপত্তি।

ম্যাখোঁর এই কর্মকাণ্ড ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট ফ্রাসোঁয়া ওলাঁদের কথা মনে করিয়ে দেয়। তিনি ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে ঐকমত্য ছাড়াই বিশেষ ক্ষমতায় শ্রম সংস্কার আইন পাস করেন। এতে সে সময় বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে ফ্রান্সে। ম্যাখোঁও একই পথে হাঁটছেন।

যদি সত্যিই ম্যাখোঁ বিশেষ আইনে শ্রম আইন পাস করেন আর বিক্ষোভের মুখে পড়েন, তাহলে তাঁকে নিয়ে হতাশ হতে হবে ফ্রান্সবাসীকে।

নির্বাচনের আগে ম্যাখোঁ কথা দিয়েছিলেন তিনি হবেন ফ্রান্সের সব মানুষের প্রেসিডেন্ট। দল বা মতের ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করবেন। উন্নয়নের পথে গাইবেন তারুণ্যের জয়গান। পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে সে কথার প্রতিফলন ঘটিয়েছেন তিনি। তাঁর নির্বাচিত পার্লামেন্ট সদস্যদের বেশির ভাগই রাজনীতিতে নতুন মুখ।

ম্যাখোঁ পার্লামেন্টে নারী সদস্যদের সংখ্যা বাড়াতে চান।সেটা করেছেনও। তবে নারীরা কেউই পার্লামেন্টের শীর্ষ পদে আসেননি। এটিও তাঁর একধরনের ব্যর্থতা।

সবকিছুর পরও ম্যাখোঁর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হলো সন্ত্রাস দমন। ২০১৫ সালে বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলায় রক্তাক্ত হয় ফ্রান্স। দুই শতাধিক মানুষ প্রাণ হারায়। এরপর থেকেই দেশটিতে একের পর এক সন্ত্রাসী হামলা চলে। কখনো রেলস্টেশন, কখনো রাস্তার পাশে,কখনো আবার মসজিদের কাছে হামলা চলেছে। সন্ত্রাসী হামলার আতঙ্ক থেকে ফ্রান্সবাসীকে মুক্ত করাও ম্যাখোঁ সরকারের চ্যালেঞ্জ। এসব বাধা পেরিয়েই পথ চলতে হবে ম্যাখোঁকে।