বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ নামের একটি বেসরকারি সংস্থার ২০১৬ সালের প্রতিবেদনের তথ্য হলো, এ দেশে প্রতিবছর বিভিন্ন রোগব্যাধিতে যত মানুষ মারা যায়, তাদের ৫৯ শতাংশই মারা যায় এমন কয়েকটি রোগে, যেগুলো সংক্রামক নয়। হৃদ্রোগ, ক্যানসার, ডায়াবেটিস, শ্বাসতন্ত্রের দীর্ঘস্থায়ী জটিলতা—এই সব অসংক্রামক রোগেই এখন বছরে প্রায় সোয়া পাঁচ লাখ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও চিকিৎসাব্যবস্থার উন্নতির প্রেক্ষাপটে যখন গড় আয়ু উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ছে, তখন এসব অসংক্রামক রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি নতুন উদ্বেগের কারণ। উদ্বেগ নিরসনের জন্য জাতীয় থেকে ব্যক্তিগত পর্যায় পর্যন্ত অনেকগুলো বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা প্রয়োজন।
উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস বেশ কিছু প্রাণঘাতী অসংক্রামক রোগের কারণ। জেনেটিক বা বংশগত ফ্যাক্টর বাদ দিলে এই দুটো ঘাতক ব্যাধির প্রকোপ ক্রমেই বৃদ্ধির কারণ জীবনযাপন ও খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যাপক অসচেতনতা ও ক্ষতিকর অভ্যাস। ধূমপান, ক্ষতিকর খাদ্যাভ্যাস, কায়িক পরিশ্রমে অনীহা ইত্যাদি পরিহার করার মাধ্যমে এ দুটো রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি ঠেকানো সম্ভব। ক্যানসারের কারণ যদিও এখন পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে জানা সম্ভব হয়নি, তবু কী কী কারণে ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি হয়, সে সম্পর্কে কিছু ধারণা পাওয়া গেছে। সুতরাং ক্যানসার এড়ানোর ব্যাপারেও সচেতনতার গুরুত্ব আছে। এ ছাড়া বাজারে যেসব তৈরি খাবার ও নানা ধরনের পানীয় বিক্রি হয়, সেগুলোর গুণগত মান নিশ্চিত করাও অত্যন্ত জরুরি। খাদ্যে চিনি ও লবণ ব্যবহারের মাত্রা কমানো দরকার; ফাস্ট ফুডের আসক্তি থেকে, বিশেষত শিশুদের রক্ষা করতে বিদ্যালয়ের আশপাশে ফাস্ট ফুড বিক্রি নিষিদ্ধ করার সময় এসেছে। খাদ্যে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার বন্ধ করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
অসংক্রামক রোগের প্রকোপ ঠেকাতে সরকারের বিশেষ মনোযোগ প্রয়োজন। এ বিষয়ে একটা জাতীয় নীতিমালার খসড়া বছর দুই আগে তৈরি করা হয়েছে, সেটি চূড়ান্ত করা হোক। অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের পাশাপাশি এসব রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা ও ওষুধপথ্য আরও সহজলভ্য করার উদ্যোগ নিতে হবে। বিশেষত যেসব ওষুধ দৈনিক ও সারা জীবন ধরে সেবন করতে হয়, সেগুলোর দাম সর্বসাধারণের ক্রয়সীমার মধ্যে থাকার ব্যবস্থা করা দরকার।
তবে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন জনসচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ।