কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙল!

প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, ‘রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকের অবস্থা পর্যালোচনা: চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উপায়’ শীর্ষক একটি কর্মশালা শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে হওয়ার কথা রয়েছে। রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলো হচ্ছে সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী, বেসিক, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট, বাংলাদেশ কৃষি ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক।

প্রশ্ন হলো কর্মশালা আদৌ সুফল দেবে কি? নীতিনির্ধারকেরা যদি মনে করেন, কর্মশালা দিয়ে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর সমস্যা চিহ্নিত করা ও প্রতিকার পাওয়া যাবে, তাহলে সেই কাজটি আগে করলেন না কেন? এমনকি সোনালী ব্যাংকের হল–মার্ক ও বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির পরও যে তাঁদের চৈতন্যোদয় হয়েছে, তার প্রমাণ নেই। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ যদি মোট ঋণের এক-তৃতীয়াংশে পৌঁছায় কিংবা দুটি ব্যাংকের ঋণের অর্ধেকেরও বেশি খেলাপি হয়ে পড়ে, তাহলে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত সবারই দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানো উচিত নয় কি?

রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকের মূল সমস্যা নীতি ও ব্যবস্থাপনার। কাকে ঋণ দিলে ফেরত পাওয়া যাবে, কাকে দিলে সেই অর্থ বিদেশে পাচার  হয়ে যাবে, সেটি কর্মশালা করে নির্ধারণ করা যাবে না। সে জন্য ব্যাংকগুলোকে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে দলীয় ও রাজনৈতিক বিবেচনার ঊর্ধ্বে থাকতে হবে এবং সব ক্ষেত্রে। বেসিক ব্যাংকের যে সাবেক চেয়ারম্যান মৌখিক নির্দেশে ঋণ দিতে কর্মকর্তাদের বাধ্য করতেন, তাঁকে আইনের আওতায় না এনে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকের বিরাজমান নৈরাজ্য দূর করা যাবে না।

 পৃথিবীর সব দেশে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তদারক করে থাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাণিজ্যিক ব্যাংকের ভালো–মন্দের দায়ও তার। কিন্তু বাংলাদেশে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ খুলে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর কর্তৃত্ব তার হাতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ফলে এসব ব্যাংকের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো কর্তৃত্বই নেই। ব্যাংকিং খাতের এই দ্বৈতশাসন ব্যবস্থার অবসান হওয়া জরুরি।

খবরদারি ও নজরদারি—দুই দায়িত্বই নিতে হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে।