চালের দাম আর কত বাড়বে!

চালের দাম বাড়ছে—এটা অন্তত তিন মাসের পুরোনো খবর। সরকারের কাছে এ খবর কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা আমরা জানি না, সংবাদমাধ্যমের কাছে বেশ গুরুতর। কারণ, এ দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষকে বছরের একটা লম্বা সময় শুধু ভাত খেয়ে বেঁচে থাকতে হয়। চালের দাম তাদের ক্রয়সাধ্যের বাইরে চলে গেলে তারা অনাহার-অর্ধাহারের ঝুঁকিতে পড়ে যায়। ব্যাপক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বিপুলসংখ্যক মানুষের জন্য ইতিমধ্যে সেই ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে, উপরন্তু সামনে রয়েছে আশ্বিন-কার্তিক মাস—মঙ্গার সময়।
সর্বশেষ খবর হলো, চালের দাম সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে, সামনের দিনগুলোতে দাম আরও বাড়বে। খাদ্যনিরাপত্তার দিক থেকে আমরা এখন এক গুরুতর সংকটের মুখোমুখি। কিন্তু খাদ্য মন্ত্রণালয় জানে না, দেশের প্রকৃত খাদ্য পরিস্থিতি কী। সরকারি খাদ্যগুদামগুলোতে সোয়া তিন লাখ টন চাল আছে—এর বাইরে তারা আর কিছু জানে না। কিন্তু জানার দায়িত্ব ছিল। দায়িত্ব বললে কম বলা হয়, আইনি বাধ্যবাধকতা বলা উচিত। কারণ, ২০১৩ সালের খাদ্য মজুত আইনে বলে দেওয়া হয়েছে, সারা দেশে বেসরকারি খাতে চালের কী পরিমাণ মজুত আছে, তা খাদ্য অধিদপ্তর প্রতি মাসে সংগ্রহ করবে এবং মজুতের পুরো চিত্রটা খাদ্য মন্ত্রণালয়ের জানা থাকবে। কিন্তু খাদ্য অধিদপ্তর গত চার বছরের মধ্যে কখনোই হিসাব রাখার এই দায়িত্বটা পালন করেনি।
শুধু তা-ই নয়, চালের সরকারি মজুত ৬ লাখ টনের নিচে নামলে বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হয় এবং জুন-জুলাইয়ের মধ্যে ১২ থেকে ১৫ লাখ টন চাল সংগ্রহ করে রাখতে হয়—এটা জানা থাকা সত্ত্বেও খাদ্য অধিদপ্তর রহস্যময় নিষ্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতা দেখিয়েছে। নিষ্ক্রিয়তা হলো এই যে সরকারি খাদ্যগুদামগুলোতে মোট মজুতের পরিমাণ দুই লাখ টনের নিচে নামা সত্ত্বেও মজুত বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আর ব্যর্থতা হলো এই যে যখন ধান-চাল সংগ্রহ করতে তৎপর হয়েছে, তখন আর তা করতে পারেনি। কারণ, ইতিমধ্যে বাজারে চালের দাম বাড়তে শুরু করেছে এবং খাদ্য অধিদপ্তর বাজারমূল্যের তুলনায় অনেক কম দামে চাল সংগ্রহ করতে নেমেছে। তারপর ঢাকঢোল পিটিয়ে চাল আমদানি শুরু করেছে, কিন্তু এখনো পর্যন্ত দেড় লাখ টনের বেশি মজুত বাড়াতে পারেনি।
অবহেলা, দায়িত্ব পালন না করা ও সামগ্রিক ব্যর্থতার জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয়ের জবাবদিহি চাওয়া দরকার। খাদ্য পরিস্থিতির আরও অবনতি ঠেকাতে অতি দ্রুত সরকারি মজুত বাড়াতে হবে এবং দ্রুত স্বল্পমূল্যে চাল বিক্রি শুরু করতে হবে।