অবহেলিত কুণ্ডি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র

রংপুর জেলার ৪ নম্বর সদ্যপুস্করণী ইউনিয়ন ব্রিটিশ আমলে কুণ্ডি পরগনা নামে পরিচিত ছিল। স্থানীয় জমিদারেরা পরগনার নাম অনুসারে দরিদ্র প্রজাদের স্বার্থে ০ দশমিক ৭৩ একর জমিতে কুণ্ডি দাতব্য চিকিত্সালয় স্থাপন করেছিলেন। শত বছর ধরে চিকিৎসাকেন্দ্রটি স্থানীয় লোকদের চিকিৎসা দিয়ে এলেও দীর্ঘদিন ধরে এটি কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলার শিকার। উপযুক্ত তদারকি ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এর অবস্থা শোচনীয়। বৃষ্টি হলেই এতে পানি ঢোকে। চিকিৎসাকেন্দ্রের আশপাশ অপরিচ্ছন্ন ও অস্বাস্থ্যকর। চিকিৎসার পরিবেশ নেই বললেই চলে।

অথচ এই চিকিৎসাকেন্দ্রটি এই এলাকার গরিব, অসহায়, দুস্থ ও পীড়িত মানুষের দ্বীপশিখা। কেননা, এখান থেকে উত্তর-পূর্ব কোণে রংপুর মেডিকেল কলেজের দূরত্ব ২০ কিলোমিটার, পশ্চিমে বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দূরত্ব ২৫ কিলোমিটার, দক্ষিণে মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দূরত্ব ৩০ কিলোমিটার। এত দূরে গিয়ে এলাকার মানুষের চিকিৎসা নেওয়া দুষ্কর ও ব্যয়বহুল।

প্রতিষ্ঠানটিতে এখন একজন এমবিবিএস ডাক্তার, একজন উপসহকারী চিকিৎসক ও দুজন স্টাফ নিয়োজিত আছেন। এই লোকবল প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। দুজন চিকিত্সক রংপুর থেকে এসে অফিস সময়ে গড়ে প্রতিদিন ১৫০ জন রোগীর ব্যবস্থাপত্র ও বিনা মূল্যে ওষুধ সরবরাহ করেন। তাঁদের আবাসিক সুবিধা না থাকায় অফিস সময়ের পর অবশিষ্ট ১৬ ঘণ্টা প্রসূতিসেবা, পানিতে পড়া রোগী, দুর্ঘটনাকবলিত রোগীরা প্রতিনিয়ত চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকে।

এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, চিকিৎসা মানুষের মৌলিক প্রয়োজনের একটি। গ্রামের মানুষ যদি এটা থেকে বঞ্চিত হয়, তাহলে তাদের দুর্গতির শেষ থাকে না। এমনিতেই তাদের আয় শহরের মানুষের মতো নয়। তার ওপর যদি স্বাস্থ্যসেবায়ও তারা পিছিয়ে থাকে, তাহলে গ্রাম–শহরের বিভেদ আরও বাড়বে, কমবে না। অথচ আমাদের সংবিধানে গ্রাম–শহরের ব্যবধান কমানোর কথা বলা হয়েছে। এই বিষয়গুলো বিবেচনা করে কুণ্ডি স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি ১০ শয্যার হাসপাতালে রূপান্তর করা হোক।

মো. শওকত আলী

কেশবপুর, পালিচড়াহাট

রংপুর।