ব্যাংক কোম্পানি বিল

যেখানে অপ্রিয় সত্য কথা বলার মানুষ কমে গেছে, সেখানে সাংসদ ফখরুল ইমামের এই বিরোধিতাকে আমরা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি। তাঁর এই আপত্তি কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে গেলেও তিনি যেসব যুক্তি দিয়েছেন, তার সারবত্তা আছে। রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর অনিয়ম-দুর্নীতি তুলনামূলক বেশি হলেও বেসরকারি ব্যাংকগুলো ভালো চলছে বলা যাবে না। বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের বেশ কিছু বেসরকারি ব্যাংকে অনিয়ম-বিচ্যুতির সঙ্গে খেলাপি ঋণের পরিমাণও বাড়ছে।

ব্যাংক কোম্পানি আইনের সংশোধনীতে একই পরিবারের চারজন পরিচালক নেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে এবং তাঁরা একনাগাড়ে নয় বছর ওই পদে থাকতে পারবেন। বর্তমান আইনে সর্বোচ্চ ছয় বছর এবং একই পরিবারের দুজন পরিচালক হওয়ার বিধান রয়েছে। গত ৪ মে মন্ত্রিসভায় বিলটি নীতিগত অনুমোদন দেওয়ার পরও ব্যাংকিং খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন।

সরকার সেসব আপত্তি ও উদ্বেগ আমলে নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি বলেই বিলটি সংসদে উপস্থাপন করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বিলটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠিয়েছেন। বিলটি নিয়ে সাংসদেরা আলোচনার সুযোগ পাবেন বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন। আমরা মনে করি, আলোচনার সুযোগ পাওয়া যথেষ্ট নয়। দেখার বিষয়, আইনটি সংশোধনের আদৌ প্রয়োজন আছে কি না? আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, সংসদীয় কমিটি বিলটি ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করে দেখবে এবং গোষ্ঠীবিশেষের চেয়ে ব্যাংকিং খাতের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেবে। আইন পরিবর্তন না করায় কোনো বেসরকারি ব্যাংকে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে, তা বলা যাবে না। বরং পারিবারিক প্রভাব খাটিয়ে কোনো কোনো ব্যাংক থেকে পরিচালকেরা মাত্রাতিরিক্ত ঋণ নিয়েছেন, এ রকম উদাহরণ অনেক আছে। আইনটি পরিবর্তন হলে প্রভাবশালীদের পোয়াবারো হলেও ব্যাংকের সাধারণ অংশীজনদের সর্বনাশ হওয়ার আশঙ্কা আছে।

অর্থমন্ত্রী একদিকে ব্যাংকগুলোকে একীভূত হওয়ার কথা বলেছেন, অন্যদিকে ব্যাংকগুলোকে ‘পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে’ পরিণত করবেন, তা মেনে নেওয়া যায় না।

 ১৯৯১ সালের ব্যাংক কোম্পানি আইনকে ২০১৩ সালে একবার সংশোধন করা হয়। নতুন করে এর সংশোধনীর প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না।