রাকার পতন হলো, এরপর কী?

রবার্ট ফিস্ক
রবার্ট ফিস্ক

রাকার পতন হয়েছে, আরও একবার আইএস অধিকৃত শহরের পতন ঘটল যোদ্ধাদের আমৃত্যু যুদ্ধ না করার কারণে। সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সের (এসডিএফ) সেনাদের বেশির ভাগই কুর্দি, তবে নিশ্চিতভাবে তারা গণতান্ত্রিক নয়। মার্কিন বিমানবাহিনীর সহায়তা ছাড়া তার কোনো শক্তি নেই।

কিন্তু খবর পাওয়া গেছে, অন্তত ২৭৫ জন সিরীয় আইএস যোদ্ধাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এটা সিরীয় সরকার ও সেনাবাহিনীর জন্য সত্যি বড় উদ্বেগের ব্যাপার। এখন তাদের কি সিরিয়ার মরুভূমিতে ঘুরে বেড়াতে এবং সিরিয়ার সেনাদের ওপর হামলা করতে দেওয়া হবে? নাকি তাদের দিয়ের-এজরে যেতে দেওয়া হবে, সিরিয়ার সেনারা যে শহরটির পূর্ণাঙ্গ নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেনি?

আইএস এ নিয়ে এক সপ্তাহে দ্বিতীয়বারের মতো দলেবলে আত্মসমর্পণ করল। তবে কুর্দি নেতৃত্বাধীন এসডিএফ বলছে, রাকায় শুধু বিদেশি যোদ্ধারাই আছে। ধারণাটা নিশ্চয়ই এ রকম যে আইএস লড়াই ছেড়ে দিয়ে সন্তুষ্ট এবং অন্য কোনো দিন যুদ্ধ করবে, অথবা তারা যুদ্ধ একেবারেই ছেড়ে দিয়ে বাড়ি যাবে। দ্বিতীয় ব্যাপারটি ঘটার সম্ভাবনাই বেশি। কিন্তু সিরিয়ার সরকারি বাহিনী রাকা থেকে মাত্র কয়েক মাইল দূরে। কুর্দিদের এসডিএফ এবং ইউফ্রেটিস নদীর তীরে ছোট একটি জায়গায় রুশ বিমানের সঙ্গেও তাদের একটি সমন্বিত কার্যালয় আছে। তারা এই বড় দলের আত্মসমর্পণের বিস্তারিত জানতে চাইবে। বিপুলসংখ্যক বন্দীর মুক্তি দেওয়ার ব্যাপারেও তারা জানতে চাইবে—যেটা এখন ঘটছে বলে মনে হয়।

ধারণা করা হচ্ছে যোদ্ধাদের প্রাথমিকভাবে রাকার বাইরে হাওয়াই আল-হাওয়া কারাগারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আশা করা যায়, মসুলের শিয়া ইরাকি যোদ্ধাদের হাতে ধৃত আইএস সেনাদের তুলনায় এদের সঙ্গে অধিকতর মানবিক আচরণ করা হচ্ছে। রাকায় স্বল্পকালীন যুদ্ধবিরতির কারণে হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিক এবং যোদ্ধাদের স্ত্রী ও সন্তানেরাও শহর ছেড়ে পালিয়ে যেতে পেরেছিল। তাই দেখা যাচ্ছে, আইএস নেতারা বীরোচিত মৃত্যু ও বেহেশতের ছবি এঁকেছিলেন, সেটা তাঁদের যোদ্ধাদের উপযুক্ত নয়, যে নেতাদের অনেকেই এখন আর জীবিত নন।

এরা বিরোধীদের সঙ্গে কথা বললে তা অসাধারণ ব্যাপার হবে, যদিও উল্লিখিত আত্মসমর্পণের তৃতীয় দৃষ্টান্ত দেখা গেল। সিরিয়া লেবাননের সীমান্তে সিরীয় ও হিজবুল্লাহর সেনারা আইএস যোদ্ধা এবং অন্য ইসলামপন্থীদের এ বছরের শুরুর দিকে লেবাননের এরসাল পাহাড় পেরিয়ে যেতে দিয়েছিল। দৃশ্যত, রাকার বিদেশি যোদ্ধাদের ভাগ্যে ক্ষমা আছে বলে মনে হচ্ছে না। দখলকারীরা ক্ষমা না করলে তাদের আমৃত্যু লড়াই করে যাওয়া ছাড়া গতি নেই। আমরা জানি না প্রাচীন আব্বাসীয় শহর রাকার অশ্বখুরাকৃতির দেয়াল ও বাগদাদের দেয়ালের কতটা অংশ অক্ষত থাকবে। এই যুদ্ধে সিরিয়ার প্রাচীন নিদর্শনের অনেক কিছুই ধ্বংস ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কখনো কখনো ইচ্ছা করেই তা করা হয়েছে। ফলে খুব কম ইতিহাসবিদই এখন এই শহরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ধ্বংসের সমালোচনা করেন।

এমনকি আইএস সিরিয়ার আল-মায়াদিন শহরও হারিয়েছে, যে শহরটা তারা কেবল এবারের গ্রীষ্মেই দখলে নিতে পেরেছিল। সিরিয়ার সরকারি বাহিনী সেটা পুনর্দখল করেছে। কিন্তু মরুভূমির যুদ্ধ ‘জয়’ করা সম্ভব হলেও তা এখনো শেষ হয়নি। এই সপ্তাহের শুরুতে দামেস্কে আবারও বোমা পড়তে শুরু করেছে, বিশেষত শহরের পুরোনো অংশে। সিরিয়ার সংবাদ সংস্থা সানা অনেক মানুষের মৃত্যুর খবর দিয়েছে। চিকিৎসকেরা বলেছেন, রোববার চারজন মারা গেছে, আর সাতজন বেসামরিক নাগরিকের শরীরে ধারালো বস্তুর আঘাত পাওয়া গেছে।

শুধু মানুষ নয়, এখানে সত্যেরও মৃত্যু হচ্ছে। মার্কিনরা দাবি করে, ইরাকে ৮০ হাজার আইএস সেনার মৃত্যু হয়েছে বলে যে খবর বেরিয়েছে, তা খুব সম্ভবত সঠিক নয়। ইরাকে ৪০ আর সিরিয়ায় ৪০ হাজার—এই পরিসংখ্যানটা কেতাবি। একটি মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করার পর কুর্দি যোদ্ধারা অভিযানের নামকরণ করেছে। সেটা হলো তাদের আরব কমান্ডার আদনান আবু আমজাদের মৃত্যু, যাঁকে এই আগস্টে শহরের মাঝখানে হত্যা করা হয়েছে।

দ্য ইনডিপেনডেন্ট থেকে নেওয়া, অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন।

রবার্ট ফিস্ক: দ্য ইনডিপেনডেন্টের মধ্যপ্রাচ্য প্রতিনিধি।