নির্বাচনী পথে নতুন নেপালের জন্ম হচ্ছে

কে পি ওলির সঙ্গে পুষ্প কমল দহল। ফাইল ছবি: রয়টার্স।
কে পি ওলির সঙ্গে পুষ্প কমল দহল। ফাইল ছবি: রয়টার্স।

দুই বৃহৎ রাষ্ট্রের ক্ষুদ্র প্রতিবেশী নেপাল। স্থলবন্দী দেশ। কিন্তু ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব অনেক। আবার অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বিধ্বংসী রেষারেষি আছে প্রধান প্রধান দলে। ফলাফল, গত ২৭ বছরে নেপালে ২৫টি সরকার আসা-যাওয়া করেছে। ১৯৯০ থেকে নেপালে বহুদলীয় নির্বাচন হচ্ছে—কিন্তু একটি পার্লামেন্টও পূর্ণ মেয়াদ শেষ করতে পারেনি। তার মধ্যে গত চার বছরে দেশটিতে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, এমন চারজনের তিনজন—কে পি শর্মা ওলি, পুষ্প কমল দহল ও শের বাহাদুর দেওবা এখন আবার লড়ছেন পরবর্তী সরকার প্রতিষ্ঠার ল‌ক্ষ্যে। এর আগে ওলি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন একবার, দহল দুবার এবং দেওবা চারবার।

নতুন যাত্রার ইঙ্গিত
বাংলাদেশের মতোই নেপালে নির্বাচন মানেই ‘উৎসব’। যদিও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের অভাবে বাংলাদেশিরা উৎসবের সেই স্মৃতি ভুলতে বসেছে বহুদিন—কিন্তু নেপাল এ সপ্তাহে নির্বাচনী প্রচার জোয়ারে ভাসছে। ২৬ নভেম্বর এবং আগামী ৭ ডিসেম্বর দুই দফায় নেপালে ফেডারেল পার্লামেন্ট ও প্রাদেশিক অ্যাসেম্বলি গড়ার নির্বাচন হবে। ২৬ নভেম্বর নির্বাচন হবে ৩২ জেলায় এবং ৭ ডিসেম্বর হবে ৪৫ জেলায়।
সর্বশেষ ২০০৮ ও ২০১৩ সালে নেপালে জাতীয় নির্বাচন হয়েছে এবং এ বছরের মাঝামাঝি তিন দফায় হয়েছে স্থানীয় সরকার নির্বাচন। পূর্ববর্তী দুটি জাতীয় নির্বাচন ছিল মূলত সংবিধান প্রণয়নের ল‌ক্ষ্যে সংবিধানসভার নির্বাচন। সেই হিসাবে ১৭ বছর পর এবার জনপ্রতিনিধিত্বশীল পার্লামেন্ট গড়তে নেপালে পার্লামেন্ট নির্বাচন হচ্ছে। এ ছাড়া আসন্ন ভোট নেপালের জন্য এবং দ‌ক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের জন্যও এক দৃষ্টান্ত। কারণ, এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নেপাল প্রকৃতই এক ফেডারেল শাসনব্যবস্থা কায়েম করতে চলেছে।

২০১৫ সালে নেপাল বহু বছরের চেষ্টায় যে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করে, তাতে দেশের জন্য সাতটি প্রদেশভিত্তিক এক ফেডারেল শাসনকাঠামোর প্রস্তাব করা হয়েছে। আসন্ন নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সেই প্রস্তাবের বাস্তবায়ন হতে চলেছে। নির্বাচন শেষে ফেডারেল পার্লামেন্ট দেশের জন্য একজন প্রধানমন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করবে। প্রাদেশিক অ্যাসেম্বলিগুলো নির্বাচিত করবে সাতজন মুখ্যমন্ত্রী। কেন্দ্রীয় ফেডারেল পার্লামেন্ট এবং প্রাদেশিক সরকার—উভয়ের নির্বাচন হবে একই সঙ্গে। শ্রীলঙ্কা ব্যাতীত এ অঞ্চলের কোনো দেশে প্রদেশ ও ফেডারেল পার্লামেন্টের নির্বাচন একই দিন অনুষ্ঠানের দৃষ্টান্ত নেই। বলা যায়, নেপালের নির্বাচন কমিশন এক দুরূহ দায়িত্ব পালন করতে যাচ্ছে আগামী দুই সপ্তাহে। তবে নেপালের গৌরবের দিক হলো, দেশটিতে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনী ব্যবস্থাকে কলুষিত করে ফেলেনি এবং নির্বাচন কমিশনও এখনো মোটাদাগে বিতর্কের ঊর্ধ্বে।

নির্বাচন কমিশনের ইমেজের মতোই নেপালের নির্বাচনী ব্যবস্থাও বাংলাদেশের চেয়ে আলাদা। বিগত কয়েক বছরের আলোচনা-পর্যালোচনা-সংলাপ-ঐক্যমতের মধ্য দিয়ে নেপাল বর্তমানে যে ফেডারেল পার্লামেন্ট গঠন করতে যাচ্ছে, তাতে পুরো দেশে নির্বাচনী আসন নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬৫টি। আগে আসনসংখ্যা ছিল ২৪০। ১৬৫টি সাধারণ আসনে সেখানে সরাসরি ভোট হবে আমাদের দেশের মতোই। এ ছাড়া আরও ১১০ জন পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হবেন বিভিন্ন দলের প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে। অর্থাৎ বিভিন্ন দল থেকে মনোনীত ব্যক্তিপর্যায়ের প্রার্থিতা থেকে ১৬৫ জন পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হবেন এবং দলগুলোর পাওয়া ভোটের আনুপাতিক হিস্যার ভিত্তিতে আরও ১১০ জন জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন। এভাবেই গঠিত হবে ২৭৫ সদস্যের ফেডারেল পার্লামেন্ট।

পার্লামেন্টে দলীয় পরিচয় জারি রাখতে একটি দলকে সরাসরি নির্বাচনে অন্তত একটি আসন এবং দলভিত্তিক ভোটের অন্তত ৩ শতাংশ পেতে হবে।

নেপালের নির্বাচনী ব্যবস্থায় এই মর্মে আরেকটি সংস্কার সাধিত হয়েছে যে আনুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত বিভিন্ন দলের প্রার্থীদের মধ্যে এক–তৃতীয়াংশ হতে হবে নারী। নারীদের জন্য এই হিস্যা প্রাদেশিক পরিষদেও রাখা হয়েছে। প্রাদেশিক পরিষদে সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবে ৬০ শতাংশ জনপ্রতিনিধি। আর বাকি ৪০ প্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন বিভিন্ন দলের প্রাপ্ত ভোটের হিস্যার থেকে। রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর বেলায় নেপালের এই নির্বাচনী সংস্কার বড় এক অগ্রগতি।

নির্বাচনী গণতন্ত্র ও উন্নয়নের যুগল
নেপালের এবারের নির্বাচনের প্রচার এজেন্ডাও একদম নতুন। ১৯৬০ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত দেশটির নির্বাচনে মূল ইস্যু ছিল গণতন্ত্রে উত্তরণের প্রশ্নগুলো। ১৯৯০ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচারে ছায়া বিস্তার করেছিল সশস্ত্র সংগ্রাম থেকে মাওবাদীদের নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে জড়িত করার উপায় নিয়ে মতভেদ। আর এবার নির্বাচনী বাগ্‌যুদ্ধ আবর্তিত হচ্ছে মুখ্যত উন্নয়ন এজেন্ডা নিয়ে। গত মে-জুন-সেপ্টেম্বরে সফলভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয়ে যাওয়ায় নেপাল নিশ্চিত হয়েছে, নির্বাচনী গণতন্ত্র তাদের দেশে ভিত্তি পেতে চলেছে এবং উন্নয়ন প্রশ্নটি তাই প্রার্থীদের সামনে বড় আকারে হাজির। এ ক্ষেত্রে প্রাদেশিক অ্যাসেম্বলি গড়তে পারা নেপালের উন্নয়নের জন্য এক ধাপ কাঠামোগত অগ্রগতি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে প্রত্যন্ত জনপদগুলো হাতের কাছেই তাদের কিছু জনপ্রতিনিধি ও উন্নয়ন কাঠামো পাবে।

ত্রিদলীয় থেকে দ্বিদলীয় ব্যবস্থায়
নেপালের এবারের নির্বাচনের তৃতীয় নতুন বৈশিষ্ট্য হলো দেশটিতে ত্রিদলীয় ব্যবস্থা থেকে দ্বিদলীয় ব্যবস্থার দিকে যাত্রা। প্রায় দুই দশক ধরে মাওবাদী পার্টি, কংগ্রেস এবং ইউএমএল পার্টি—প্রায় সমান তালে জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করে চলছিল। বিগত দশকে কয়েকটি নির্বাচনে মাওবাদী দল (কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল-মাওইস্ট সেন্টার) সবচেয়ে ভালো করলেও বিগত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তারা তৃতীয় অবস্থানে ছিল। অপর কমিউনিস্ট পার্টি ইউএমএল (কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল-ইউএমএল) ওই নির্বাচনে বিভিন্ন স্তরের সর্বমোট ২৬ হাজার ৭৯০টি আসনের মধ্যে ১১ হাজার আসন পেয়ে প্রথম হয়। নেপালি কংগ্রেস ৮ হাজার ৭০০ আসন জয় করে দ্বিতীয় স্থান পায়। স্থানীয় সরকারের ওই নির্বাচন শেষে জাতীয় নির্বাচন শুরু হওয়া মাত্র মাওবাদী পার্টি ও ইউএমএল পার্টি বলছে, তারা ফেডারেল পার্লামেন্টে ও প্রাদেশিক অ্যাসেম্বলির নির্বাচনে একসঙ্গে লড়বে এবং নির্বাচন শেষে দল হিসেবেও একীভূত হয়ে যাবে। গত ৩ অক্টোবর এই ঘোষণার পর ২৬ নভেম্বর ও ৭ ডিসেম্বরের আসন্ন নির্বাচনে কার্যত দ্বিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে। একদিকে রয়েছে ‘বাম জোট’ এবং তার বিপরীতে ক্ষমতাসীন নেপালি কংগ্রেস কয়েকটি ক্ষুদ্র দল নিয়ে গড়ে তুলেছে ‘গণতান্ত্রিক জোট।’

বাম জোট বলেছে, তাদের লক্ষ্য আগামী ১০ বছরের মধ্যে নেপালিদের মাথাপিছু গড় আয় ৫ ডলারে উন্নীত করা। নেপালি কংগ্রেস বলছে, তারা ১০ বছরে ৫০০ কিলোমিটার নতুন রেললাইন বসাতে চায়। এ রকম বহু উন্নয়নধর্মী প্রতিশ্রুতিতে সরগরম এ মুহূর্তে নেপালের বিভিন্ন উপত্যকা।

ইতিমধ্যে যতগুলো নির্বাচনী জরিপ হয়েছে, তাতে বাম জোটই এগিয়ে রয়েছে। তবে যেহেতু অনেক অনেক বছর পর দেশটিতে পরিপূর্ণ অর্থে জাতীয় নির্বাচন হচ্ছে, তাই ১৮ থেকে ৪০ বছর বয়সী ভোটাররা কাকে ভোট দেবেন, এ নিয়ে আঁচ-অনুমান করতে গিয়ে গবেষক ও বিশ্লেষকেরা হিমশিম খাচ্ছেন।

আগ্রহের কেন্দ্রে তরুণেরা
নির্বাচনে শহুরে তরুণদের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ দেখা গেছে। বিশেষ করে গত এক দশকে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলের দূরে থেকে যারা বিভিন্ন সামাজিক কাজের মধ্য দিয়ে জাতীয় পরিসরে পরিচিতি পেয়েছে, তাদের নির্বাচনমুখী হতে দেখা যাচ্ছে। এটা এই নির্বাচনে এক বড় প্রবণতা হিসেবে হাজির হয়েছে। এ রকম তরুণদের একটি মনোযোগ আকর্ষণী দল হলো ‘বিবেকশীল-সাজা পার্টি’, যাদের ভোটের ফল জানতে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা বিশেষ আগ্রহী।

নির্বাচনে তরুণদের আগ্রহের সরব প্রকাশ দেখা যাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতেও। এবারই প্রথম নেপালের নির্বাচনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্রধান প্রচারমাধ্যমের ভূমিকা নিয়েছে। নেপালে সাধারণভাবে প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষের ইন্টারনেটে অভিগম্যতা আছে। প্রায় ৭০ লাখ নেপালি ফেসবুকে সক্রিয়। নির্বাচন উপল‌ক্ষ্যে দেশটির অন্তর্জাল দুনিয়া তাই খুবই উত্তপ্ত। প্রধান দল ইউএমএলের কর্মীরা গর্ব করেই জানাচ্ছে, তাদের ইন্টারনেট পেজে লাইক রয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার। তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী নেপালি কংগ্রেস এ ক্ষেত্রে বেশ পিছিয়ে। তাদের লাইকসংখ্যা দেড় লাখ মতো। নির্বাচনী যুদ্ধে শামিল প্রায় সব নেতা ফেসবুক ও টুইটারেই প্রচার কাজের বড় অংশ সারছেন। অতীতের মতো পোস্টার ও মাইকিংয়ের চেয়েও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রচারে এগিয়ে থাকতে প্রত্যেক দলের তরুণ কর্মীরা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে দিন-রাত পালা করে কাজ করছে।

নতুন নেপালের পদধ্বনি
স্বভাবতই এসব হলো এক নতুন নেপালের পদধ্বনি, যাতে নজর রাখছে নয়াদিল্লি এবং বেইজিংও। বস্তুত নির্বাচনের শুরুতে চীনের প্রতি পক্ষপাত রয়েছে এমন দুটি প্রধান কমিউনিস্ট দলের জোট গড়ে ওঠায় দিল্লিতে কিছুটা হতাশা তৈরি হলেও নির্বাচনী ফল নিয়ে দুশ্চিন্তামুক্ত নয় বেইজিংও।

নেপাল বিষয়ে অভিজ্ঞ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা জানেন, দেশটিতে ভারতের প্রকাশ্য প্রভাবের চেয়ে অপ্রকাশ্য ক্ষমতা অনেক বেশি। দেশটির নতুন সংবিধান তার পরামর্শমতো না হওয়ায় ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ভারত নেপালের বিরুদ্ধে কয়েক মাস অবরোধ আরোপ করে রেখেছিল। মাত্র এক বছর আগে ক্ষমতাসীন ইউএমএল পার্টি ও এর নেতা কে পি শর্মা ওলি চীনের সঙ্গে ট্রানজিট ও রেল যোগাযোগ চুক্তি করার মাত্র পাঁচ মাসের মধ্যে ক্ষমতাচ্যুত হন। সে সময় ওলি সরকারের ওপর থেকে যারা সমর্থন প্রত্যাহার করে ইউএমএল সরকারের পতন নিশ্চিত করেছিল, সেই মাওবাদী দলই এখন তাদের জোটের মুখ্য অংশীদার। ফলে এই জোট ভোটে বিজয়ী হলেও সরকারের রূপ কী দাঁড়াবে এবং তার প্রতি ভারতের মনোভাব কী হবে, এসব নিয়ে দুশ্চিন্তা কাটছে না।

মে মাসে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ফাইল ছবি: এএফপি
মে মাসে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ফাইল ছবি: এএফপি

তবে বেইজিং ও নয়াদিল্লি বিভিন্নভাবেই নির্বাচনে নিজেদের উপস্থিতি জারি রাখছে। নেপালকে ভারত ‘ঐতিহাসিক মিত্র’ মনে করে। যেমন কিছুদিন আগের স্থানীয় নির্বাচন ‘সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা’র জন্য ভারত নির্বাচন কমিশনকে ৫০টি যানবাহন উপহার হিসেবে দিয়েছে! চীনও পিছিয়ে ছিল না। তারা দিয়েছে নির্বাচন পরিচালনার খরচ হিসেবে ১০ লাখ ডলার। নেপালের নির্বাচন কমিশন যে ভোটবাক্সগুলো ব্যবহার করছে, সেগুলোও চীনে তৈরি। নেপালের অবস্থা এমন নয় যে বড় দুই প্রতিবেশীর সহায়তা সে প্রত্যাখান করতে পারে।

ব্যয়ের বহর
তবে এসব দান-অনুদানের বদৌলতেই বোধ হয় নেপালের নির্বাচনী সংস্কৃতিও বেশ ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে। দেশটির নির্বাচন পর্যবেক্ষণকাজে নিয়োজিত সুপরিচিত সংস্থা ‘ইলেকশন অবজারভার কমিটি’র (ইওসি) গবেষণার ভিত্তিতে কাঠমান্ডু পোস্ট ১৮ নভেম্বর প্রতিবেদন করেছে, এ বছরের স্থানীয় নির্বাচনকালে দেশটিতে নির্বাচন কমিশন, নিরাপত্তা বাহিনী ও প্রার্থীদের সম্মিলিত নির্বাচনী ব্যয় ছিল প্রায় ৭০ বিলিয়ন রুপি। নেপালে ভোটার ১ কোটি ৪০ লাখ। এই হিসাবে ভোটারপ্রতি গড়ে কেবল নির্বাচনী খরচ প্রায় পাঁচ হাজার রুপি। আসন্ন পার্লামেন্ট ও প্রাদেশিক নির্বাচনেও এমনই খরচ হবে।

যে দেশে ২৫ শতাংশ মানুষের দৈনিক আয় এখনো ২০০ রুপির নিচে, সেখানে এক বছরে ১৪০ বিলিয়ন রুপি নির্বাচনের জন্য ব্যয় কিছুটা বিলাসিতাতুল্য বৈকি। বহুদলীয় নির্বাচন টেকসই উন্নয়নের ভিত রচনা করলেই কেবল এরূপ বিলাসিতা অর্থবহ হতে পারে। আশা করা হচ্ছে, যে জনগণ রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ২৩৯ বছরের পুরোনো রাজতন্ত্র বিলোপ করতে পেরেছে, তারা হয়তো গণতন্ত্র ও উন্নয়নের দুরূহ সংগ্রামেও বিজয়ী হবে।

আলতাফ পারভেজ: দ‌ক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাস বিষয়ে গবেষক।