তাজরীন ট্র্যাজেডির পাঁচ বছর

বিভিন্ন শ্রমিক ও মানবাধিকার সংগঠনের চাপের মুখে সরকার তাজরীনের নিহত শ্রমিকদের স্বজন ও আহত শ্রমিকদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। এর ফলে পরিবারগুলো বাঁচার একটি অবলম্বন খুঁজে নিতে পেরেছে। কিন্তু সেখানেও প্রতারণার ঘটনা আছে। জরিনা বেগম নামের এক আহত শ্রমিকের স্বামী প্রাপ্ত অর্থের একাংশ নিয়ে উধাও হয়ে গেছেন। 

 বিভিন্ন তথ্য–প্রমাণে বেরিয়ে এসেছে মালিকপক্ষের সীমাহীন অবহেলা ও অব্যবস্থার কারণেই তাজরীনে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটেছে। মামলা তদন্ত করে সিআইডি তাজরীনের এমডি, চেয়ারম্যান, প্রকৌশলী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, স্টোর ইনচার্জসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে তদন্ত কর্মকর্তার গাফিলতির কারণে বিচারকাজ প্রলম্বিত হয়। কিন্তু ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত জজ ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন এই মামলার শুনানি হতে পারছে না সাক্ষীর অভাবে। সাক্ষী হাজির করার দায়িত্ব রাষ্ট্রপক্ষেরই। গত এক বছরে মোট ১০৪ জন সাক্ষীর মধ্যে তারা হাজির করেছে মাত্র দুজন। এ রকম একটি স্পর্শকাতর মামলার সাক্ষী হাজির করতে না পারার পেছনে অন্য কোনো রহস্য আছে কি না, খুঁজে বের করা দরকার। 

তাজরীনের দুর্ঘটনাটি ছিল মানবসৃষ্ট। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দায়িত্বে অবহেলার কারণেই ১১১ জন পোশাকশ্রমিককে জীবন দিতে হয়েছে। যাঁরা মারা গেছেন, আমরা তাঁদের ফিরিয়ে আনতে পারব না। কিন্তু ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের মানবসৃষ্ট দুর্ঘটনা না ঘটে, সে জন্য তাজরীন–কাণ্ডের বিচার হতেই হবে। আশা করব, বিলম্বে হলেও রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষীদের হাজির করে বিচারকাজে সহায়তা করবে। বিচারহীনতার সংস্কৃতির অবসান চাই।