'বড় মানুষের সংবর্ধনা'

শিক্ষা মন্ত্রণালয় পরিপত্র জারি করে বলেছিল, মন্ত্রী-সাংসদ বা অন্য কাউকে সংবর্ধনা দেওয়ার নামে বিদ্যালয়ের ছোট্ট শিশুদের রাস্তায় লাইন করে দাঁড় করানো যাবে না। অথচ সেই পরিপত্র অগ্রাহ্য করে সরকারেরই দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা সমানে সংবর্ধনা নিয়ে চলেছেন। কাদের কাছ থেকে সংবর্ধনা নিচ্ছেন? যে এলাকার মানুষ তাঁদের ভোট দিয়ে বা না দিয়ে সাংসদ বানিয়েছেন (উল্লেখ্য, গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩ জনই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত)।
প্রথমেই বলা দরকার, নিজের নির্বাচনী এলাকায় মন্ত্রী-সাংসদদের সাড়ম্বরে সংবর্ধনা নেওয়ার মধ্যে বাহাদুরি নেই। নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও সাংসদদের সংবর্ধনা দেওয়ার নামে বিদ্যালয়ের শিশুদের রাস্তায় লাইন করে দাঁড় করানোর ঘটনায় বিভিন্ন মহলে সমালোচনার পর সংবর্ধনার মাত্রা কিছুটা কমে গেলেও যে একেবারে বন্ধ হয়নি, মৌলভীবাজারের ঘটনাই তার প্রমাণ। মৌলভীবাজার-১ আসনের সাংসদ মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন হুইপ মনোনীত হওয়ায় গত শনিবার ঘটা করে সংবর্ধনা নিয়েছেন এবং এ উপলক্ষে শিশুদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। প্রথম আলো প্রতিনিধি লাইনে দাঁড়ানো সম্পর্কে একটি শিশুকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, কেন তারা এখানে এসেছে? জবাবে সে বলেছে, ‘একজন বড় মানুষ আইব, এ জন্য স্যাররা নিয়ে এসেছেন।’
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকেরা পরিপত্রের কথা জানেন না বলে সাফাই গাওয়ার চেষ্টা করেন। আর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শাও নোটিশ করার কথা বলেছেন। মনে হচ্ছে, তাঁদের দায়িত্ব এখানেই শেষ।
বিষয়টি কেবল আইনি নয়, এখানে নৈতিকতার প্রশ্নও জড়িত। যেসব ‘বড় মানুষের’ সংবর্ধনার জন্য বিদ্যালয়ের ছোট শিশুদের লাইনে দাঁড় করিয়ে রাখতে হয়, সেসব বড় মানুষকে কেন এলাকাবাসী নির্বাচিত করেন? তাঁরা তো এমন কাউকে নির্বাচিত করবেন, যাঁরা সবার একজন হবেন, সবার চেয়ে বড় হবেন না।
অনেক হয়েছে। আশা করি, মন্ত্রী-সাংসদদের সংবর্ধনার নামে শিশুদের লাইনে দাঁড় করানোর অপসংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।