স্বরূপে ফিরেছে ছাত্রলীগ!

নতুন করে ক্ষমতাসীন হয়ে বর্তমান সরকার নানা ক্ষেত্রে পরিবর্তনের আশ্বাস দিয়েছে, কিন্তু সরকারি দলের ছাত্রসংগঠনকে সম্ভবত
ছাড় দিয়ে এর বাইরে রাখা হয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারি দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ প্রমাণ দিল যে তারা তাদের পুরোনো চরিত্রই ধরে রেখেছে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দমনে শুধু পুলিশ দিয়ে কাজ হয়নি, মাঠে নামতে হয়েছে বা নামানো হয়েছে ছাত্রলীগকেও!
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর অস্ত্র নিয়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের হামলার এই ন্যক্কারজনক ঘটনার দায় প্রাথমিকভাবে ছাত্রলীগের ওই বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির হলেও সামগ্রিকভাবে সংগঠনটির এবং চূড়ান্ত বিচারে সরকারের। একটি ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীরা কিসের জোরে এমন বেপরোয়া হয়ে ওঠে, তা আমাদের সবারই জানা। প্রথম আলো পত্রিকায় অস্ত্র হাতে যাদের ছবি ছাপা হয়েছে, তারা অচেনা দুর্বৃত্ত নয়, এদের মধ্যে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক! তাঁরা অস্ত্র হাতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছেন! এঁদের নেতা বানিয়েছেন কারা? কাদের সমর্থন ও আশীর্বাদ রয়েছে তাঁদের ছাত্রলীগের নেতা হওয়ার পেছনে?
বর্ধিত বেতন-ভাতা প্রত্যাহার বা সন্ধ্যাকালীন মাস্টার্স কোর্স বন্ধের আন্দোলন কতটা যৌক্তিক, তা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক হতে
পারে। ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে বসে তা ঠিক করার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। এর পরও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রয়েছে। এসব বাদ দিয়ে ছাত্রলীগকে কেন মাঠে নামতে হলো? সরকারের তরফে সায় না থাকলে এভাবে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মাঠে নামার বিষয়টি কতটুকু বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে! এই অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে সরকারকে এখন প্রমাণ করতে হবে যে এই দুর্বৃত্তপনা ও অপকর্মে তাদের কোনো সায় ছিল না।
শিক্ষামন্ত্রী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করে ‘তদন্তের ভিত্তিতে দায়ীদের’ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন। আমরা শুধু আশ্বাস নয়, কার্যকর ব্যবস্থা দেখতে চাই। অস্ত্রধারী হিসেবে যাদের ছবি গণমাধ্যমে এসেছে, তারা তো এরই মধ্যে চিহ্নিত। একজন সাধারণ অস্ত্রধারী দুর্বৃত্ত ও ছাত্রলীগের এই নেতাদের মধ্যে আইনগত পার্থক্য করার কোনো সুযোগ নেই। আমরা দেখতে চাই, আইন তার নিজের গতিতে চলছে। কিন্তু সরকারি দলের ছাত্রসংগঠনের নেতাদের জন্য কি আইন নিজের মতো চলে? রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলার ঘটনার পর কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছে এবং শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু সবাই সময়মতো হল ত্যাগ করলেও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা নির্দিষ্ট সময়ের পরও হলে অবস্থান করছিলেন।
নতুন করে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর সরকারি দলের ছাত্রসংগঠন তাদের যে জঘন্য রূপ প্রকাশ করল, এর বিরুদ্ধে সরকার কী ব্যবস্থা নেয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।