বিপর্যস্ত ব্যাংকিং খাত

দীর্ঘদিনের অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির কারণে ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ফারমার্স ব্যাংকটি ডুবতে বসেছে। মূল সমস্যা হলো পরিচালক-ব্যবস্থাপকেরা মিলে ব্যাংকটিকে প্রায় আমানতশূন্য করে ফেলেছেন। গ্রাহকেরা ব্যাংকে তাঁদের জমা অর্থ তুলতে গিয়ে বিমুখ হচ্ছেন। এ ব্যাপারে ব্যাংকটির উপদেষ্টা যে কৈফিয়ত দিয়েছেন, তা–ও গ্রহণযোগ্য নয়। আমানতের চেয়ে ঋণ বেশি হলে মূলধন-সংকট হবে, তা সবারই জানা কথা। প্রশ্ন হলো ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ এ ব্যাপারে আগে থেকে সজাগ হলো না কেন? কেনই-বা আমানতকারীদের গভীর অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দেওয়া হলো?

ফারমার্স ব্যাংক বাঁচাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিশেষ কর্মসূচির আওতায় ৫০০ কোটি টাকার বন্ড ছাড়ার অনুমোদন দিয়েছে বলে প্রথম আলোর খবরে বলা হয়। এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফারমার্সের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ও নিরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যানকে সরিয়ে দেয়। সর্বশেষ ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম শামীমকেও অপসারণ করা হয়। যেকোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয় গ্রাহকদের আস্থার ওপর। সেখানে এই টোটকা ওষুধে কাজ করবে কি না, সে বিষয়ে সন্দেহ আছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক তিন গভর্নর অবিলম্বে পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে ব্যাংকটিতে প্রশাসক নিয়োগের পরামর্শ দিয়েছেন।

ডুবন্ত ফারমার্সকে বাঁচাতে হলে পরিচালনা পর্ষদের পুনর্গঠন জরুরি। এর আগে ওরিয়েন্টাল ব্যাংক রক্ষায়ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিশেষ কর্মসূচি নিয়েছিল। ওরিয়েন্টাল ব্যাংকের মালিকানা ও নাম পরিবর্তন করে ব্যাংকটি টিকিয়ে রাখা গেলেও আমানতকারীরা এখন পর্যন্ত টাকা ফেরত পাননি।

অতএব, যে পদক্ষেপই নেওয়া হোক না কেন, ফারমার্স ব্যাংকের সাধারণ গ্রাহক তথা আমানতকারীদের যাতে স্বার্থ রক্ষা হয়।একই সঙ্গে যাঁদের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে ফারমার্স ব্যাংক ধ্বংসের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার বিকল্প নেই। অন্যায় করে কেউ পার পেলে অন্যরাও অন্যায় করতে উৎসাহিত হয়।

রাজনৈতিক বিবেচনায় একের পর এক ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পরিণাম কী হতে পারে, ফারমার্স ব্যাংকের ঘটনা ফের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। এ ব্যাপারে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে গোটা ব্যাংকিং খাতে বিপর্যয় ডেকে আনবে।