২০ শীর্ষ ঋণখেলাপি

খেলাপি ঋণ একটা বৈশ্বিক সমস্যা। কিন্তু অন্যদের সঙ্গে যেটা তফাত তা হলো, উল্লেখযোগ্য অংশ ঋণ শুধু খেলাপি নয়, কিছু ঘটনা ইঙ্গিত দিচ্ছে যে এর সপক্ষে কাগজপত্র খুবই দুর্বল। উপরন্তু রাজনৈতিক বিবেচনায় ছাড়পত্র দেওয়া ৯টি নতুন বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ যখন ৮৬ শতাংশের বেশি বেড়ে যায়, তখন ব্যাংকিং খাতের নৈরাজ্যকর
চিত্রটি স্পষ্ট হয়।

২০০৩ সালের অর্থঋণ আদালতের মাধ্যমে খেলাপি ঋণ উশুলের যে দেওয়ানি ব্যবস্থাটি চলমান, তা ইতিমধ্যে অকার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। একসময় সংসদে শীর্ষ ঋণখেলাপিদের তালিকা প্রকাশ পেত, হইচই হতো, কিন্তু বর্তমান সংসদ কখনো তালিকা প্রকাশ করেনি। এটা তাদের করা উচিত হবে। মানুষের জানা দরকার কারা ঠেকায় পড়ে খেলাপি আর কারা অভ্যাসগত আজীবন ঋণখেলাপি। সব ঋণখেলাপিকে নিশ্চয় এক পাল্লায় মাপা যাবে না।

অবশ্য সংসদে অর্থ মন্ত্রণালয়–সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটি, সরকারি অনুমিত হিসাব কমিটি এবং সরকারি হিসাব কমিটির কতিপয় সদস্য অনানুষ্ঠানিকভাবে ঋণখেলাপিদের তালিকা সময়ে সময়ে মিডিয়াকে দিয়েছেন। বোঝাই যায়, ঋণখেলাপিদের বাগে আনতে না পারায় তাঁরা বিব্রত। কিন্তু দরকার হলো শীর্ষ ঋণখেলাপি ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তাদের যাবতীয় কাগজপত্রসহ সংসদীয় কমিটি আয়োজিত শুনানিতে হাজির করা।

ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তারা ঋণ সরবরাহের সময় আইনের শর্ত অনুযায়ী দরকারি কাগজপত্র ঠিকঠাক আছে কি না, তা তারা অনেক ক্ষেত্রে খতিয়ে দেখে না। তারা রাজনৈতিক তদবির ও যোগসূত্রকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। সে কারণে কিছু কুঋণ বেড়েছে, যা জনগণের আমানত আত্মসাতের শামিল।

প্রতিবেশী ভারতের ৩০ শীর্ষ কোম্পানির কাছে এক-তৃতীয়াংশের বেশি খেলাপি ঋণ (প্রায় ৭২ হাজার কোটি টাকা) আটকে পড়ার পটভূমিতে তা মোকাবিলায় প্রথমে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ এবং পরে লোকসভা নির্দিষ্ট একটি আইন পাস করেছে। এ ধরনের পদক্ষেপ আমরাও বিবেচনা করতে পারি। তবে সে জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছার বিকল্প নেই।