চট্টগ্রামের খাল খনন প্রকল্প

চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা স্থায়ীভাবে নিরসনের জন্য নতুন খাল খননের প্রকল্প বাস্তবায়নে যে গড়িমসির ভাব লক্ষ করা যাচ্ছে, তা দুর্ভাগ্যজনক। এ অবস্থায় নগরবাসীর দুর্ভোগ নিরসনে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন আসলে কতটা আন্তরিক—সেই প্রশ্ন খুবই স্বাভাবিক।

শনিবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, সাড়ে তিন বছর আগে ২০১৪ সালে চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটের বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত নতুন খাল খনন প্রকল্পের অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (একনেক)। প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ছিল ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত। অথচ প্রকল্পের কাজ এখনো শুরুই হয়নি। শুরুতে এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩২৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে জমি অধিগ্রহণের ব্যয় ছিল ২২৪ কোটি টাকা। এখন শুধু জমি অধিগ্রহণে ব্যয় হবে ১ হাজার ১০৩ কোটি টাকা। যেখানে শুধু জমি অধিগ্রহণের খরচই বেড়েছে সাড়ে তিন গুণ, সেখানে গোটা প্রকল্পের খরচ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা সহজেই অনুমেয়।

একদিকে খরচ বৃদ্ধির কারণে যেমন প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে, তেমনি এই প্রকল্পের ব্যাপারে সিটি করপোরেশনের অবস্থানও বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন নতুন খাল খনন প্রকল্প বাস্তবায়নে খুব একটা আগ্রহী নন বলে জানা গেছে। ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় এবং মানুষের ঘরবাড়ি ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হবে—এসব কারণে তিনি প্রকল্প বাস্তবায়নের পক্ষে নন বলে প্রথম আলোকে বলেছেন। কিন্তু নগরের জলাবদ্ধতা দূর করতে এই নতুন খাল খননের কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বোঝা যায় ভোটের রাজনীতি ও কিছু মানুষ অসন্তুষ্ট হতে পারে—এই ভয়ে তিনি প্রকল্পটির ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। এই প্রকল্পের সঙ্গে যেহেতু পুরো চট্টগ্রামের স্বার্থ জড়িত সেখানে ব্যয় বৃদ্ধি বা কিছু মানুষের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার অজুহাত গ্রহণযোগ্য নয়। প্রকল্পটি যখন প্রথম গ্রহণ করা হয়েছিল তখন এর বাস্তবায়ন করলে খরচ এত বাড়ত না। এখন যদি সিটি করপোরেশনের গড়িমসির কারণে আরও দেরি হয় তবে খরচ আরও বাড়বে।

বর্ষা মৌসুমে চট্টগ্রাম নগরী ভয়াবহ জলাবদ্ধতার মধ্যে পড়ে। বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের কার্যকর ব্যবস্থা না থাকার কারণেই এমন হচ্ছে। মহানগরীর ভেতরে ছোট-বড় যে ৫৭টি খাল রয়েছে, তার অনেকগুলোই ভরাট হয়ে গেছে। জলাবদ্ধতা দূর করতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে নানা প্রকল্প নেওয়া ও অর্থ খরচ করা হয়েছে। কিন্তু ফলাফল শূন্য।

চট্টগ্রাম নগরীকে জলাবদ্ধতা মুক্ত করতে প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগ নিতে হবে। নতুন খালের প্রকল্পটি কার্যকর বিবেচিত হলে তা–ই করতে হবে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ বিবেচনায় নিয়ে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে সক্রিয় হবে বলে আমরা আশা করছি।