গণপরিবহনে নারী নিরাপত্তা

দেশে শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে নারীর পদচারণ বেড়েছে। তাঁদের প্রতিদিন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা কর্মস্থলে যেতে হয়। এ ছাড়া সংসারের নানা ধরনের প্রয়োজনে নারীদের ঘরের বাইরে বের হতে হয়। তাঁদের অনেকের যাতায়াতের জন্য গণপরিবহনই ভরসা। অথচ গণপরিবহনে যাতায়াত করতে গিয়ে তঁারা প্রতিনিয়ত হেনস্তা ও যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। পুরুষ যাত্রীরা তো আছেনই, পাশাপাশি চালক ও সহকারীরাও এ ধরনের অপকর্মে অংশ নিচ্ছেন। দেখা যাচ্ছে কোনো তরুণী বাসে একা হলেই তিনি ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। আমরা রূপার বেলায়ও তা-ই দেখেছি। এ রকম চলতে থাকলে এ দেশের নারীরা গণপরিবহনে কীভাবে যাতায়াত করবেন?

সম্প্রতি রূপা ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় চারজনকে ফাঁসির আদেশ ও একজনকে সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এই রায়ের মধ্য দিয়ে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপিত হলেও তা গণপরিবহনে নারীর নিরাপত্তাকে নিশ্চিত করবে এমন কথা হলফ করে বলা যায় না। গণপরিবহনে নারীরা যাতে নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারেন, সে জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। দেখা যায়, গণপরিবহনে কোনো নারী যৌন হয়রানির শিকার হলেও তিনি কোথায় অভিযোগ করবেন ঠিক বুঝে উঠতে পারেন না৷ অভিযোগ জানানোর বিষয়টি সহজ করতে হবে৷ এ জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত চালু করা যেতে পারে। রুট অনুযায়ী ভ্রাম্যমাণ আদালতের ফোন নম্বর গণপরিবহনের প্রকাশ্য স্থানে লিখে রাখা যেতে পারে৷

আমাদের দেশে গণপরিবহনে চালক ও সহকারী নিয়োগের ক্ষেত্রে তেমন কোনো নিয়ম মানা হয় না। মালিকপক্ষ তাদের ইচ্ছামতো পরিবহনশ্রমিক নিয়োগ করে। গাড়িতে চালক ও সহকারী নিয়োগের বিষয়টি শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে হবে। তাঁদের নিয়োগপত্র দিতে হবে, যাতে বিভিন্ন শর্তের উল্লেখ থাকবে। তাঁদের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে এবং অতীতের কর্মকাণ্ড যাচাই করে ছবি ও দরকারি সব তথ্য নিয়ে তবেই নিয়োগ দিতে হবে, যাতে কোনো অপরাধ করলে তাঁদের দ্রুত শনাক্ত করা যায়। এ ছাড়া মালিকদের উচিত যাত্রীদের সঙ্গে তাঁদের আচরণ কেমন হবে, সে ব্যাপারে বাসের কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া৷

তবে এ ব্যাপারে সরকারের তরফে করণীয় ঠিক করা জরুরি। গণপরিবহনে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে সব পক্ষের সঙ্গে পরামর্শ করে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিতে হবে।