হবিগঞ্জের বাঁধ সংস্কার

শনিবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, গত বছরের বন্যায় হবিগঞ্জ জেলার প্রায় ৪০ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ কারণে সরকারি হিসাব অনুযায়ী প্রায় ১৬ হাজার হেক্টর জমির বোরো ফসল সম্পূর্ণভাবে এবং প্রায় ৬০ হাজার হেক্টর জমির ফসল অর্ধেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সম্প্রতি পাউবোর হবিগঞ্জ কার্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত ওই ৪০ কিলোমিটার ফসল রক্ষা বাঁধের মধ্যে অতি জরুরি ৩৫ কিলোমিটার বাঁধ সংস্কারের জন্য পাউবোর সদর দপ্তরে একটি চাহিদাপত্র পাঠায়। এর বিপরীতে যে বরাদ্দ পাওয়া গেছে, তা দিয়ে ওই কাজ কোনোভাবেই সম্ভব নয়। কোন বিবেচনায় ৩৫ কিলোমিটার বাঁধ সংস্কারে পাউবোর সদর দপ্তর চলতি অর্থবছরে মাত্র ২ কোটি ৮১ লাখ টাকা বরাদ্দ দিল, তা এক বড় প্রশ্ন।

পাউবো যে অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে, তা দিয়ে ১৩ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার করা সম্ভব। ফলে এই যাত্রায় ৪০ কিলোমিটারের মধ্যে সংস্কার হচ্ছে মাত্র ১৩ কিলোমিটার। ফলে বাকি ২৭ কিলোমিটার বাঁধ সংস্কারহীন অবস্থায় থেকে যাচ্ছে। সামনে বর্ষা আসছে। স্থানীয় কৃষকেরা আশঙ্কা করছেন, এই বাঁধ সংস্কারবিহীন থেকে গেলে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে জেলার প্রায় ১ লাখ ১৬ হাজার ৫১০ হেক্টর জমির বোরো ফসল ঝুঁকিতে পড়বে। আর নতুন করে ভাঙন দেখা দিলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষে তা তাৎক্ষণিক সামাল দেওয়া সম্ভব হবে না।

হবিগঞ্জের ভাটি এলাকার কৃষকেরা এক ফসলি বোরো ধানের ওপর নির্ভরশীল। এ দিয়েই চলে এ অঞ্চলের কৃষকের সারা বছরের অন্নসংস্থান।
এটা তাঁদের আয়ের গুরুত্বপূর্ণ একটি উৎসও বটে। কিন্তু এখানকার অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো সঠিক সময়ে এবং টেকসই কায়দায় ফসল রক্ষা বাঁধ
তৈরি এবং মেরামত না করা। এ কাজটি যথাযথভাবে না করায় ২০০১ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত আটটি বন্যায় কৃষকেরা তাঁদের ফসল ঘরে তুলতে
পারেননি। এখন জেলার ফসল রক্ষা বাঁধগুলো যদি সংস্কার করা না হয়, তাহলে নিশ্চিতভাবেই বিপুল পরিমাণ বোরো ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বোঝা
যায় পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে পাউবো সদর দপ্তর যথাযথ উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হয়েছে।

আগামী বর্ষার আগেই পুরো বাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেরামত কীভাবে নিশ্চিত করা যায়, সে ব্যাপারে পাউবোকে জরুরি উদ্যোগ নিতে হবে।