সাতক্ষীরায় পানিসংকট

আর্সেনিকের দূষণ উপদ্রুত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় সাতক্ষীরার মানুষ খাওয়ার পানির জন্য হাহাকার করছে। এই প্রচণ্ড খরতাপে প্রতিদিন প্রায় দেড় কোটি লিটার পানির চাহিদার বিপরীতে মাত্র অর্ধেক পরিমাণ পানি সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে। পানির ঘাটতি পূরণ করতে গিয়ে নগরবাসী তার জীবনধারা পাল্টাচ্ছে। পানি যাঁরা কিনতে অপারগ, তাঁরা কম পানি ব্যবহার, পুরুষেরা দূরবর্তী কোনো জলাশয়ে গিয়ে গোসল সারার মতো নানা ধরনের কষ্টকর উপায় অবলম্বন করছেন। কিন্তু পৌর মেয়র, জেলা প্রশাসন বা স্থানীয় সাংসদের তরফে মানুষের এই জীবন-মরণ সমস্যা মোকাবিলায় কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই।

অন্যান্য নগরীর মতো ‘জনস্বার্থ’ দেখার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি ও সংস্থার সংখ্যার কোনো আকাল সাতক্ষীরাতেও নেই। ভোটের বছরে স্থানীয় সাংসদ নিশ্চয়ই রাস্তাঘাট নির্মাণসহ বিভিন্ন বিশেষ খাতের বরাদ্দ খরচ করতে বিশেষভাবে মনোযোগ দিচ্ছেন। কিন্তু ভোটের বাজারে পানি সরবরাহ সম্ভবত অগ্রাধিকারের মধ্যে পড়ে না। সাতক্ষীরার মেয়র বিএনপির নেতা বলে সরকারের বিমাতাসুলভ আচরণের শিকার, শুধুই এই যুক্তি ধোপে টেকে না। অনেকে বলছেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই এর আগের এক মেয়াদে বিএনপির মেয়র ছিলেন, কিন্তু তখন পানিসংকটের এতটা ব্যাপকতা হয়নি।

পানিসংকট নিরসনে মেয়র ও জেলা প্রশাসন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। প্রায় ১০ লাখ পানি গ্রাহকের এই নগরীর এ সংকট নিরসনে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর দিক থেকে অনতিবিলম্বে জরুরি হস্তক্ষেপ দরকার। স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া দরকার। প্রথমত বাটকেখালী এলাকার নির্মীয়মাণ প্রতিদিন ৩৫ লাখ লিটার (১২ এপ্রিল অনবধানতাবশত প্রথম আলোয় ৩৫ হাজার ছাপা হয়েছে) পানি উৎপাদনক্ষমতাসম্পন্ন পাম্পটির নির্মাণকাজ ২০১৬ সালের অক্টোবরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। এর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজে গাফিলতি হলে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার। আর কোনো ওজর-আপত্তি ছাড়াই এটি দ্রুত শেষ করতে ঠিকাদারকে বাধ্য করতে হবে। বেশ কিছুদিন ধরে সময়ে-সময়ে সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার যে খেলা চলছে, তা বন্ধ করতে হবে।

দ্বিতীয়ত, মাত্র দেড় লাখ টাকা খরচে এবং অনধিক চার দিন সময়ে উন্নত গভীর নলকূপ বসিয়ে তা থেকে এক লাখ লিটারের বেশি পানি পাওয়া সম্ভব। সরকার জনবান্ধব হলে জরুরি ভিত্তিতে এ রকম ৪০টি নলকূপ বসানো হলে মানুষ হাঁফ ছেড়ে বাঁচতে পারে।

তবে আর্সেনিকের কারণে অনেক নলকূপ বন্ধ করে দেওয়া, নগরীর পুকুরগুলোকে ভরাট করে সুউচ্চ ইমারত নির্মাণ করতে দেওয়া, প্রাণসায়ের খালটি পানিশূন্য হওয়া এবং সর্বোপরি পানির স্তর প্রায় ৩৫ ফুট নিচে নেমে যাওয়ার কারণে পৌরসভার বিদ্যমান ১৩টি পাম্প থেকে পানি কম ওঠার মতো উদ্বেগজনক বিষয়গুলো মাথায় নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি জুতসই পরিকল্পনা নিতে হবে।