খুলনা ও গাজীপুর নির্বাচন

গাজীপুর ও খুলনা
গাজীপুর ও খুলনা

গেল বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল নির্বাচন কমিশনে গিয়ে দলের পক্ষে দুটি দাবি জানিয়ে এসেছে। তাদের প্রথম দাবি ছিল, সংসদীয় আসনের সীমানা পরিবর্তন করা যাবে না; যদিও নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে ৪০টি আসনের সীমানা পরিবর্তন করে খসড়া তৈরি করেছে। এ নিয়ে শুধু আওয়ামী লীগ নয়, বিএনপিসহ আরও কয়েকটি দলের পক্ষ থেকে দাবি ও আপত্তি তোলা হয়েছে। ২১ এপ্রিল থেকে শুনানি শুরু হবে। আশা করব, সব পক্ষের মতামত শুনে নির্বাচন কমিশন এমন সিদ্ধান্ত নেবে, যা সব পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। বিতর্ক এড়াতে কমিশন প্রকাশ্যে শুনানির ব্যবস্থা করতে পারে।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দ্বিতীয় যে দাবিটি করা হয়েছে, বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় তা শুধু অযৌক্তিক নয়, সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। স্থানীয় সরকার সংস্থার নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করতেই মন্ত্রী-সাংসদদের প্রচারের ওপর বিধিনিষেধ আরোপের বিধান জারি করা হয়েছে আচরণবিধিতে। যেখানে প্রশাসন থেকে শুরু করে সবকিছুর ওপর ক্ষমতাসীন দলটির একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত, সেখানে সাংসদদের স্থানীয় নির্বাচনে প্রচারকাজে অংশগ্রহণের অন্যায্য সুযোগ কেন দিতে হবে, তা আমাদের বোধগম্য নয়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় সাংসদেরা স্থানীয় উন্নয়নকাজের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত। সে ক্ষেত্রে নির্বাচনী প্রচারে তাঁরা কোনো প্রার্থীর পক্ষে অংশ নিলে নির্বাচন প্রভাবিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। সেই বিবেচনায় বর্তমান আচরণবিধির পরিবর্তন কোনোভাবে কাম্য হতে পারে না।
প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা স্থানীয় সাংসদেরা প্রচারে অংশ না নিলে কিংবা এলাকায় স্বাভাবিক কাজকর্ম চালাতে না পারলে সবকিছু অচল হয়ে যাবে বলে যে মন্তব্য করেছেন, তা হাস্যকর। স্থানীয় সরকার সংস্থার নির্বাচনের প্রচারকাজ চলে এক মাসের কম সময় ধরে। এই সময়ে সাংসদেরা স্বাভাবিক কার্যক্রম না চালালে কোনো কিছুই অচল হয়ে যাবে না; বরং তাঁরা নির্বাচনের সময় ‘স্বাভাবিক কার্যক্রম’ চালালেই নির্বাচনী পরিবেশটি অস্বাভাবিক হওয়ার সমূহ আশঙ্কা আছে। এর আগে পৌরসভা নির্বাচনের আগেও আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল নির্বাচন কমিশনে অনুরূপ দাবি তুলেছিল। সেই সময় নির্বাচন কমিশন ক্ষমতাসীনদের সেই দাবি আমলে না নিয়ে বুদ্ধিমানের কাজ করেছে।
স্থানীয় সরকার সংস্থার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভাষায় সাংসদদের ‘স্বাভাবিক কার্যক্রম’ না থাকলে যে ভালো নির্বাচন হতে পারে, কুমিল্লা ও রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনই তার প্রমাণ। দুটো নির্বাচনই সুষ্ঠু হয়েছে এবং জনরায়ের প্রতিফলন ঘটেছে। অতএব গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও কমিশন তার অবস্থানে অনড় থাকবে আশা করি।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ১৫ মে খুলনা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন এবং ঈদের পর বরিশাল, রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন হবে। এরপরই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু হয়ে যাবে। তাই নির্বাচন কমিশনের নির্বাচনী আচরণবিধিতে এমন কোনো পরিবর্তন আনা ঠিক হবে না, যাতে নির্বাচনী পরিবেশ আরও জটিল ও ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। বরং জাতীয় নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও অবাধ করতে নির্বাচন কমিশনকে আরও কিছু জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। ২০০৮ পর্যন্ত সব নির্বাচন হয়েছে সংসদ ভেঙে দিয়ে। সংবিধান অনুযায়ী, সংসদ বহাল রেখেই আগামী নির্বাচন হবে। সে ক্ষেত্রে সাংসদদের সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে আগের নিয়ম বহাল থাকলে সাংসদ নন, এমন প্রার্থীদের প্রতি চরম বৈষম্য হবে। অতএব, বিষয়টি নিয়ে এখনই চিন্তাভাবনা জরুরি।