কোটা সমস্যার দ্রুত সুরাহা চাই

শিক্ষার্থীদের সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্পের মতো ‘শেষ হয়েও হইল না শেষ’। অর্থাৎ বিষয়টি এখনো ঝুলে রয়েছে, পরিষ্কার কোনো ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না। শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে নানা অঘটন ঘটেছে, কিন্তু আন্দোলনের যৌক্তিকতা অস্বীকার করা যাবে না। বর্তমানে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ নিয়োগ হয় কোটার ভিত্তিতে আর ৪৪ শতাংশ হয় মেধার ভিত্তিতে। এতে মেধাবী শিক্ষার্থীরাই শুধু বঞ্চিত হচ্ছেন না, জনপ্রশাসনও দক্ষ জনবল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

আন্দোলনের একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে কোটা থাকবে না বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। আর আন্দোলনকারী সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতারাও প্রধানমন্ত্রীর কথায় আশ্বস্ত হয়ে প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করেন। এর আগে সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠকে এক মাসের মধ্যে সমাধানের বিষয়ে সমঝোতা হলেও সাধারণ শিক্ষার্থীরা তা মানেননি।

প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর স্বাভাবিক কারণে সবাই ধরে নিয়েছিলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন পর্বের ইতি ঘটবে, শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরে যাবেন। শিক্ষাঙ্গনে শান্তি ও স্থিতিশীল অবস্থা ফিরে আসবে। কিন্তু বাস্তবে সেটি আসেনি। আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করলাম, আন্দোলনের তিন নেতাকে ডিবি অফিসে চোখ বেঁধে ধরে নিয়ে যাওয়া হলো, যদিও পরে পুলিশ এটিকে ভুল–বোঝাবুঝি বলে সাফাই গাওয়ার চেষ্টা করেছে। এরপর কবি সুফিয়া কামাল হল প্রশাসন কোটা সংস্কার আন্দোলনে যুক্ত থাকার কারণে তিন শিক্ষার্থীকে মধ্যরাতে হল থেকে বের করে দেয়, পরে সমালোচনার মুখে তাঁদের ফিরিয়ে আনতেও বাধ্য হয়। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত নেতা তো বটেই, সাধারণ শিক্ষার্থীরাও ভয়ভীতিতে আছেন। কখনো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, কখনো সরকার-সমর্থক ছাত্রসংগঠনটি ইন্ধন দিচ্ছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেছেন, তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার অপেক্ষায় আছেন। প্রধানমন্ত্রী সেদিন সংসদে ‘কোটার প্রয়োজন নেই’ বলে ঘোষণা দেওয়ার পাশাপাশি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখার কথাও বলেছেন। বিশেষ ব্যবস্থাটি কী হবে, সেটাও প্রশ্ন বটে। সংসদীয় কমিটিতেও সাংসদেরা কোটা পুরোপুরি বাতিল না করে সংস্কারের পক্ষে অভিমত দিয়েছেন। ফলে বিষয়টির একটি দ্রুত সুরাহা জরুরি। আমাদের সংবিধানেও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ সুবিধা দেওয়ার কথা রয়েছে। সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ যে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করেছিল, তাদেরও মূল কথা ছিল কোটা বাতিল নয়, যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসা।

যেখানে লাখ লাখ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ জড়িত, সেখানে জেদাজেদির কোনো সুযোগ আছে বলে মনে করি না। তরুণদের মনের ভাষা সরকারকে বুঝতে হবে। তাই সরকারকে এমন সিদ্ধান্তে আসতে হবে, যাতে আন্দোলনকারীদের দাবি পূরণ হয়, আবার অনগ্রসর জনগোষ্ঠীও বঞ্চিত না হয়। আন্দোলন শুরু হওয়ার পর প্রায় তিন সপ্তাহ হতে চলেছে। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনাকালে সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের যে এক মাসের সময়সীমা নিয়েছিলেন, তারও বেশি বাকি নেই। মহান মে দিবস, পবিত্র শবে বরাত, বুদ্ধপূর্ণিমা ইত্যাদি মিলে এক সপ্তাহের বেশি সরকারি অফিস বন্ধ থাকবে। প্রধানমন্ত্রীও যুক্তরাজ্য ও সৌদি আরব সফর শেষে দেশে ফিরেছেন।

এ অবস্থায় আন্দোলনকারী তো বটেই, দেশবাসীরও প্রত্যাশা, দ্রুততম সময়ে বিষয়টির সুরাহা হোক। কেননা, কোটা সংস্কারের বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখা বা এ নিয়ে সবাই ধোঁয়াশার মধ্যে থাকুক, এটা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। সমস্যাটি যত ঝুলে থাকবে, গুজব ততই ডালপালা মেলতে থাকবে। আমরা এই বিষয়টির একটি দ্রুত ও ন্যায়সংগত সমাধান দেখতে চাই।