রোহিঙ্গা সংকটের সম্পূর্ণ সমাধান চাই

কনস্তানতিন শুভালভ
কনস্তানতিন শুভালভ

রাশিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী মিখাইল লিওনিদোভিচ বাগদানোভ আগামী ৪ মে ঢাকায় যাচ্ছেন। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুসলিম দেশবিষয়ক রাষ্ট্রদূত (অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ) কনস্তানতিন শুভালভ ২৩ এপ্রিল ক্রিমিয়ার ইয়াল্টায় কৃষ্ণসাগরের তীরবর্তী হোটেল মৃয়ায় প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, রাশিয়া দ্বিপক্ষীয় ভিত্তিতে রোহিঙ্গা সংকটের একটি সম্পূর্ণ সমাধান আশা করছে।

রাশিয়ার ক্রিমিয়ায় সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন মিজানুর রহমান খান

প্রথম আলো: ঢাকা-মস্কো সম্পর্ক কীভাবে দেখছেন?

কনস্তানতিন শুভালভ: আমি মনে করি, এটাই খুব ভালো অবস্থানে রয়েছে। সর্বোচ্চ পর্যায়ে আমাদের ভালো বোঝাপড়া রয়েছে। অন্যান্য পর্যায়েও ভালো কর্মসম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে। কয়েক সপ্তাহ আগে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী মস্কো সফর করে গেছেন। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে তিনি একটি ফলপ্রসূ বৈঠক করেছেন। বাংলাদেশে আমরা একটি উল্লেখযোগ্য বৈঠকে মিলিত হতে যাচ্ছি। ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ৪৫ তম অধিবেশন হবে ঢাকায়। আমাদের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী বাগদানোভের সঙ্গে আমিও ৪ মে ঢাকায় আসছি।
প্রথম আলো: আপনি কি ওই বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন? বাংলাদেশে কখনো গিয়েছেন কি?
কনস্তানতিন শুভালভ: না। এটা আমার অধিক্ষেত্র নয়। তবে সেখানে দ্বিপক্ষীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ওই বৈঠকের পরে উভয় দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের অবহিত করেছেন। তাঁরা আলোচনার বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন। বাংলাদেশে এটাই হবে আমার প্রথম সফর।
প্রথম আলো: সের্গেই লাভরভ রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেছেন। কিন্তু আপনাদের দিক থেকে সেটা কেমন চেষ্টা হতে পারে? আপনি যেহেতু মুসলিম দেশগুলোতে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ রাষ্ট্রদূত, আপনি বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন? 

কনস্তানতিন শুভালভ: আমরা বিশ্বাস করি, কোনো পক্ষেরই উচিত হবে না বিষয়টিকে জটিল করে তোলা। সংকটের সমাধান খুঁজে পেতে আপনাদের সঙ্গে মিয়ানমারের যে দ্বিপক্ষীয় যোগাযোগগুলো রয়েছে, তা ব্যবহার করা উচিত।

প্রথম আলো: কিন্তু আমরা বুঝতে চাইছি যে বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু হিসেবে এ বিষয়ে রুশ সরকারের প্রকৃত অবস্থানটি কী?
কনস্তানতিন শুভালভ: এটাই আমাদের প্রকৃত অবস্থান। আমরা একটি সমাধানে সমর্থন ও উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছি, যা কিনা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।

প্রথম আলো: সেটা কি শুধুই দ্বিপক্ষীয় পর্যায়ে? এর দ্বারা সুরাহা হবে?
কনস্তানতিন শুভালভ: হ্যাঁ, মূলত দ্বিপক্ষীয় ভিত্তিতে আমরা এর সমাধান দেখতে চাইছি।

প্রথম আলো: তার মানে, আপনারা কোনো বহুপক্ষীয় সমাধান সূত্রের পক্ষে নন, তাই কি?
কনস্তানতিন শুভালভ: আমরা মনে করি, দ্বিপক্ষীয়ভাবে সমাধান খুঁজে পাওয়ার সম্ভাব্যতা সম্পূর্ণভাবে খতিয়ে দেখা উচিত। বহুপক্ষীয় কুশীলবদের দ্বারা এমন কোনো চেষ্টা হওয়া উচিত নয়, যাতে আপনার প্রতিবেশীর সঙ্গে কোনো চুক্তিতে পৌঁছাকে বাধাগ্রস্ত করে।

প্রথম আলো: রাশিয়া তার বন্ধু ভারতকে এ বিষয়ে কোনো উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে কোনোভাবে উৎসাহিত করছে কি না?
কনস্তানতিন শুভালভ: এই প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি ঠিক প্রস্তুত নই। কারণ, আমি এর বিস্তারিত জানি না।

প্রথম আলো: ওআইসি এর আগে বলেছে, তারা মিয়ানমারের ওপর চাপ রাখবে। রাখাইনের মানবাধিকার পরিস্থিতি ও জরুরি মানবাধিকার বিষয়ে আগামী মাসে অনুষ্ঠেয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে রিপোর্ট পেশ করবে। ওআইসির পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র হিসেবে আপনাদের অবস্থান কী হবে?
কনস্তানতিন শুভালভ: এ বিষয়ে আমাদের একটি নিজস্ব অবস্থান রয়েছে। (হেসে) আমরা পর্যবেক্ষক, তাই আমরা পর্যবেক্ষণ করব। আমরা পর্যবেক্ষণ করছি।

প্রথম আলো: রাশিয়া এখন পর্যন্ত কোনো কিছু সরবরাহ করে দুর্গত রোহিঙ্গাদের সাহায্য করেছে?
কনস্তানতিন শুভালভ: হ্যাঁ, রাশিয়া থেকে কয়েকটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে গিয়েছে। তারা উদ্বাস্তু শিবির পরিদর্শন করেছে। কিছু সহায়তা রোহিঙ্গাদের দেওয়া হয়েছে।

প্রথম আলো: চেচনিয়া থেকে একটি প্রতিনিধিদল?
কনস্তানতিন শুভালভ: হ্যাঁ, চেচনিয়ার উচ্চকক্ষের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে গিয়েছিল।

প্রথম আলো: এবং তারা নিপীড়িত মুসলিম রোহিঙ্গাদের দাবির প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছে।
কনস্তানতিন শুভালভ: তারা রোহিঙ্গা সমস্যার একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজতে তাদের সাহায্য করার প্রস্তুতি প্রদর্শন করেছে।

প্রথম আলো: আপনার সরকার নিশ্চয়ই রোহিঙ্গাদের আশু প্রত্যাবাসন দেখতে আগ্রহী?
কনস্তানতিন শুভালভ: শুধুই আশু প্রত্যাবাসন নয়, এই সমস্যার একটি সম্পূর্ণ সমাধান দেখতে চাইছে।

প্রথম আলো: আপনি কি আপনার এই সম্পূর্ণ সমাধান কথাটার সংজ্ঞা দিতে পারেন?
কনস্তানতিন শুভালভ: এর অর্থ হলো, এ বিষয়ে আর কোনো কিছুই ঝুলে থাকবে না।

প্রথম আলো: আপনি তো এটা মানছেন যে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার রাশিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্ব ও আস্থার সম্পর্ক বজায় রাখছে?
কনস্তানতিন শুভালভ: হ্যাঁ।

প্রথম আলো: তাহলে আমরা দেখছি, মিয়ানমারের মতো দেশের ওপর চাপ রাখতে আওয়ামী লীগ একটা অসুবিধার মধ্যে আছে। আপনি কি মনে করেন, পশ্চিমা সরকারগুলো এর সমাধানে যা করছে তা যথেষ্ট? তারা কি যথেষ্ট চাপ দিচ্ছে?
কনস্তানতিন শুভালভ: আমার মনে হয় না যে তাদের নীতি যথেষ্ট কি যথেষ্ট নয়, সে বিষয়ে একটি মূল্যায়ন করা আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এ বিষয়ে আমার একেবারেই কোনো মন্তব্য নেই।

প্রথম আলো: ক্রিমিয়া, সিরিয়া, ফিলিস্তিন বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থানে কি আপনারা সন্তুষ্ট?
কনস্তানতিন শুভালভ: হ্যাঁ।

প্রথম আলো: অনেকে রোহিঙ্গা সংকটকে ফিলিস্তিনের সঙ্গে তুলনা করছেন। ফিলিস্তিন সংকটে আপনাদের সর্বশেষ অবস্থান?
কনস্তানতিন শুভালভ: এটা সুবিদিত, দুই রাষ্ট্রব্যবস্থার পক্ষে আমরা।

প্রথম আলো: ঢাকায় কি আপনারা এবার রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের মতো দ্বিপক্ষীয় কোনো বিষয়ে আলোচনা করবেন?
কনস্তানতিন শুভালভ: না। দুই দেশের মধ্যে বিরাজমান দ্বিপক্ষীয় সব আলোচনাই মস্কোতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে হয়ে গেছে। তা ছাড়া, বাগদানোভের দায়িত্ব হলো মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা এবং ওআইসি সদস্যভুক্ত দেশগুলোর বিষয় নিয়ে কথা বলা।

প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ।
কনস্তানতিন শুভালভ: ধন্যবাদ।