গাজীপুরের নির্বাচন স্থগিত

আর এবারও অনেকটা দায়সারা ও যান্ত্রিকভাবে একজন জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, আদেশের অনুলিপি হাতে পেয়ে তাঁরা পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেবেন। তফসিলের পরে রিট নিরুৎসাহিত করতে সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা আছে। আবার শামসুল হুদা কমিশনের একটি যুগান্তকারী সুপারিশ মেনে বাংলাদেশের আইনসভা ২০১১ সালে সংবিধান সংশোধন করে। নির্বাচন কমিশনের সুপারিশে সংবিধানে কোনো সংশোধনী আনার নজির বিরল। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে ১২৫ অনুচ্ছেদে এরূপ সংশোধনী আনা হয় যে ‘কোনো আদালত, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হইয়াছে এইরূপ কোনো নির্বাচনের বিষয়ে, নির্বাচন কমিশনকে যুক্তিসংগত নোটিশ ও শুনানির সুযোগ প্রদান না করিয়া, অন্তর্বর্তী বা অন্য কোনোরূপে কোনো আদেশ বা নির্দেশ প্রদান করিবেন না।’

আমরা স্বাভাবিকভাবেই আশা করেছিলাম যে এই বিধান যুক্ত হওয়ার কারণে তফসিল ঘোষণার পরে কোনো নির্বাচন স্থগিত করা বা দ্রুততার ভিত্তিতে কোনো অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ জারির বিষয়টি সংবিধানের আলোকে বদলে যাবে। এটি নতুন ধারার সূচনা হবে। কিন্তু এটা গভীর দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় যে নির্বাচন কমিশন নতুনভাবে পাওয়া এই সাংবিধানিক অধিকার প্রয়োগে যথেষ্ট সক্রিয় ভূমিকা পালনে আগ্রহী বলে মনে হচ্ছে না। তারা যখন ১২৫ অনুচ্ছেদের শর্ত মোতাবেক ‘যুক্তিসংগত নোটিশ’ লাভ করেছিল, তখনই তা তাদের প্রকাশ করা উচিত ছিল। আর সেই নোটিশ পাওয়ার খবরটি যে গণমাধ্যমে বড় শিরোনামে পরিণত হতো, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু এখন ইসির দায়িত্বে অবহেলার কারণে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বৈধতা যে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে, তা জানার আগেই দেশবাসীকে বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতোই নির্বাচন তিন মাসের জন্য স্থগিত রাখার খবর জানতে হলো।

বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশনের জন্য যা বিবেচনায় নেওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে তিন মাস মানে বিষয়টি ফয়সালার জন্য তিন মাস পর্যন্ত হাত-পা গুটিয়ে অপেক্ষা করা নয়। ইসি চাইলে ৬ মে দেওয়া হাইকোর্টের আদেশের অনুলিপি ছাড়াই চেম্বার জজের কাছে প্রতিকার প্রার্থনা করতে পারে। তারা বলতে পারে যে একই রিট দরখাস্তকারীর ২০১৫ সালের রিটের পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার তদন্ত ও গণশুনানি করে ৪ মার্চ ২০১৮ প্রজ্ঞাপন জারি করেছে যে তিনি (স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা) যে ছয়টি মৌজা সাভারের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত বলে দাবি করেছেন, তা ১৯৭৮ সালে জয়দেবপুরের প্রশাসনিক এলাকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর আর কখনোই কোনো পরিবর্তন হয়নি। গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনসহ সব নির্বাচনে ওই ছয় মৌজার ভোটাররা গাজীপুরের অধিবাসী হিসেবেই ভোট দিয়েছেন। বরং রিটকারীর নিজের ঠিকানারই ঠিক নেই বলেও ওই প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছিল। রিটকারী প্রথম আলোকে বলেছেন, ছয় মৌজার প্রায় ১০ হাজার ভোটার সাভারে আসতে চান, সেই দাবি পূরণে তিনি রিট করেছিলেন।

গাজীপুরে একটা বিরাট উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচনী প্রচারণা চলছিল। আকস্মিকভাবে নির্বাচন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সব পক্ষের মধ্যেই বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি গাজীপুরের আওয়ামী লীগ প্রার্থীও একে ‘ষড়যন্ত্রের’ অংশ হিসেবে দেখছেন। আমরা আশা করব, ইসি এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দ্রুত আপিল করবে। এবং কেন তারা রিটের শুনানিতে সর্বাত্মকভাবে অংশ নিতে শৈথিল্য প্রদর্শন করেছে, তার একটা ব্যাখ্যা দেবে।