দখলে মৃতপ্রায় চিংগুড়িয়া খাল

পটুয়াখালীর কলাপাড়ার চিংগুড়িয়া খালের বিভিন্ন অংশ দখলমুক্ত করার দাবিতে গত সোমবার কলাপাড়া পৌর শহরের সচেতন নাগরিকদের ব্যানারে যে মানববন্ধন ও সমাবেশ হয়েছে, তার প্রতি আমরা আমাদের অকুণ্ঠ সমর্থন জানাই। দখল ও দূষণের কবলে পড়ে খালটির যে হাল হয়েছে, তা একেবারেই অনভিপ্রেত।

মঙ্গলবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, আন্ধারমানিক নদ থেকে উৎপন্ন হয়ে শহরের মাঝখান দিয়ে প্রবাহিত চিংগুড়িয়া খালের একাংশ শেষ হয়েছে রজপাড়া গ্রামে। অপর অংশ শেষ হয়েছে বাদুরতলী গ্রামে। তবে দুদিকের এ শেষাংশ এখন আর খুঁজে পাওয়া যায় না। সেখানে বাড়িঘর নির্মাণ করে, জমি বানিয়ে দখল করা হয়েছে। এখন বাকি যেটুকু রয়েছে, তা দুই পাড়ের বাসিন্দারা দখল করছেন। খালের কুমারপট্টি সিমেন্টের পোল, আকড়াবাড়ি এলাকার সিমেন্টের পোল, কবরস্থানসংলগ্ন সিমেন্টের পোল, এতিমখানা এলাকার সিমেন্টের পোল এবং রহমতপুর-রাডারসংলগ্ন এলাকার সিমেন্টের পোল এলাকায় দখল সবচেয়ে বেশি। এসব জায়গায় কয়েক শ স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। বসানো হয়েছে কয়েক শ শৌচাগার। এ ছাড়া বাসাবাড়ি, দোকানপাট, হোটেলের শৌচাগারের সংযোগ দেওয়া হয়েছে খালের সঙ্গে। ফলে খালের পানি দূষিত হয়ে গেছে। মোটকথা, খালটি এখন নালায় পরিণত হয়েছে।

রাজস্ব জরিপের নকশা অনুযায়ী, পূর্ব দিকে প্রবাহিত খালটির দৈর্ঘ্যে ছিল প্রায় তিন কিলোমিটার। দখলের ফলে কমে এখন এক কিলোমিটারে দাঁড়িয়েছে। পশ্চিম দিকে প্রবাহিত খালটির দৈর্ঘ্য ছিল এক কিলোমিটার। এখন তা আধা কিলোমিটারে দাঁড়িয়েছে। পৌর কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সময় খালের বিভিন্ন অংশে অপরিকল্পিতভাবে কালভার্ট নির্মাণ করায় খাল আরও সংকুচিত হয়েছে।

এভাবে একটি খাল ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, অথচ তা দেখার কেউ নেই? দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই এ খালের দখল প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং আজও তা বন্ধ হয়নি। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, এখানে প্রশাসন বলে কিছু নেই। এই পরিস্থিতি খুবই হতাশাজনক। তবে শুধু চিংগুড়িয়া খাল নয়, সারা দেশের এ রকম অনেক খাল, নদী দখল-দূষণের কবলে পড়ে হারিয়ে যাচ্ছে। খাল ও নদীর তীরে স্থাপিত শিল্পকারখানার বর্জ্যে বিষাক্ত হচ্ছে পানি। অন্যদিকে তীর দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করায় সংকুচিত হচ্ছে সেগুলো।

চিংগুড়িয়া খাল দখলের ব্যাপারে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তানভীর রহমান জানিয়েছেন, চিংগুড়িয়া খালসহ ১২টি ইউনিয়নের সব খাল দখলদারদের হাত থেকে উদ্ধারের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
আমাদের প্রত্যাশা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার এ উদ্যোগ সফলতার মুখ দেখবে। পূরণ হবে কলাপাড়া পৌর এলাকার নাগরিকদের দাবি।