খুলনা সিটি নির্বাচন

দেশের মানুষের নজর থাকবে আগামীকালের খুলনা নগরীর দিকে। সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে দুই প্রার্থীর প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ প্রচারাভিযানের প্রেক্ষাপটে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে যাচ্ছেন। ধারণা করা হচ্ছে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা হিসেবে পুলিশ বাহিনী দলনির্বিশেষে নির্মোহ ভূমিকা পালন করলে খুলনা একটি আদর্শ নির্বাচন উপহার দিতে পারে।

দুই প্রধান দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোনীত প্রার্থীদের তুলনামূলক পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি একটি অত্যন্ত ইতিবাচক দিক। গাজীপুরে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী বাছাইয়ে সমস্যা তৈরি হলেও খুলনায় তা ঘটেনি। উপরন্তু খুলনা মহানগর থেকে দুই মূল প্রার্থীরই অতীতের ভালো নির্বাচনে জয়ী হওয়ার রেকর্ড আছে। তবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনী প্রস্তুতি ও প্রচারণাও যে সহিংসতামুক্ত থাকতে পারে, তার সত্যতা আমরা এখন পর্যন্ত খুলনায় প্রত্যক্ষ করেছি। খুব বড় ধরনের হানাহানির ঘটনা ঘটেনি।

তবে খুলনা সিটি নির্বাচনে একটি প্রত্যাশিত লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা গেছে—এমনটি দ্বিধাহীনভাবে বলতে পারলে আমরা সবচেয়ে খুশি হতাম। কিন্তু বাস্তবতা তা বলছে না। কিছু ঘটনায় এটা পরিষ্কার যে নির্বাচন কমিশন ক্ষমতাসীন দলের চাহিদা পূরণে বিএনপির থেকে বেশি সংবেদনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। তবে তার থেকেও যেটি পীড়াদায়ক সেটি হলো, প্রচারাভিযানকালে পুলিশ বিএনপির শতাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। আওয়ামী লীগের একজনও গ্রেপ্তার বা আটক হননি। আরও অভিযোগ হলো, বিএনপির প্রচারাভিযানে যাঁরা সক্রিয় ভূমিকা রাখছিলেন, অন্তরীণ হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে তাঁরাই উল্লেখযোগ্য। সুতরাং একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে পুলিশ যে বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে, সেই আশঙ্কা থাকছেই। সুতরাং আগামীকালের ভোটাভুটির দিনে নির্বাচনের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা ছাড়া, বিশেষ করে পুলিশ কোথায় কখন কী ভূমিকা পালন করে, সেটি নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের কৌতূহলের বিষয় হবে।

সাধারণ নির্বাচন সামনে রেখে ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে আদৌ কোনো কট্টর মহল যদি যেকোনো মূল্যে খুলনার মেয়র নির্বাচনে জয়ী হওয়ার মনোভাব পুষে থাকে, তাহলে তার থেকে দুঃখজনক আর কিছুই হতে পারে না। কারণ, বর্তমান সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হলো তারই অধীনে ৩০০ আসনে একটি গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্পন্ন করার সব রকম সম্ভাবনার জানালাগুলো খুলে দেওয়া। ধারাবাহিকভাবে দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা এবং জাতীয় সংসদে দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসনধারী কোনো দল যদি একটি স্থানীয় নির্বাচনে জয় পেতে ঝাঁপিয়ে পড়ার নীতি নেয়, তবে প্রকারান্তরে তা দলটির দুর্বলতাকেই তুলে ধরবে। ফলে ক্ষমতাসীন দলের দৃষ্টিভঙ্গির ওপর আগামীকালের নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হওয়া বা না হওয়ার অনেকটাই নির্ভর করবে। তবে একই সঙ্গে বিরোধী দলের প্রার্থীর দায়িত্বশীলতাও একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

খুলনার সিটি নির্বাচনটি ভালোভাবে সম্পন্ন করতে পারলে তা ঈদের পর গাজীপুরসহ আরও তিনটি সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনের সামর্থ্যের প্রতি দেশবাসীর আস্থা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে খুলনাসহ পাঁচটি সিটি নির্বাচন আয়োজন করতে পারলে নির্বাচন কমিশন নিশ্চিতভাবেই একটি আস্থার ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে পারবে। নির্বাচন কমিশনের নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিছু সূত্র ঘরোয়াভাবে এমন ধারণা দিচ্ছে যে পুলিশ তার বৈধ সহযোগিতা অব্যাহত রাখলে তারা ভালো নির্বাচন করতে পারবে। বাস্তবতা হলো, অদৃশ্যে যারাই থাকুক, কারচুপি হলে তার বদনাম ইসিকেই নিতে হবে, সরকার কিন্তু নেবে না।

খুলনার নির্বাচন বাংলাদেশের রাজনীতিতে আশার সঞ্চার করুক, সেটাই প্রত্যাশিত। নিরাপত্তা পেলে ভোটকেন্দ্রের বাইরে উৎসবমুখর পরিবেশে খুলনাবাসীর স্বতঃস্ফূর্ত ভোটদানের দৃশ্য হতেই পারে একটি স্বাভাবিক ঘটনা। খুলনাবাসীকে হতাশ করবেন না।