জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প

ইসরায়েলি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ৭০তম বার্ষিকীতে রক্তগঙ্গা বইয়ে দিয়ে জেরুজালেমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা দূতাবাস স্থানান্তরের অবৈধ পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আমরা তীব্র ক্ষোভ, নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এটা শুধু বিশ্বের এক শ কোটির বেশি মুসলিমেরই নয়, অন্যান্য ধর্মীয় সম্প্রদায়ের অনুভূতি, বিশেষ করে দল–মত–ধর্ম–বর্ণনির্বিশেষে শান্তিতে বিশ্বাসী মানুষের হৃদয়ে আঘাত হানবে।
৭০ বছর ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ন্যায্য ও ন্যায়বিচারের মানদণ্ডে শান্তিপূর্ণভাবে এই সংকটের সমাধানে প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছিল বলে সময়ে
সময়ে তারা দাবি করেছে, সেটা আজ তাদের এই একতরফা কর্তৃত্বপরায়ণ পক্ষপাতমূলক পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হলো। লক্ষণীয় যে মার্কিন
দূতাবাস উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে তেল আবিবভিত্তিক ৮৬টি দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও মাত্র ৩৩টি দেশের প্রতিনিধির উপস্থিতি নিশ্চিত করে যে বিষয়টি নিতান্তই একটি ট্রাম্প শো।

ঢাকা যদিও এখন পর্যন্ত আলাদাভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়নি, কিন্তু ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের কাউন্সিলের বর্তমান সভাপতি হিসেবে ঢাকা থেকে প্রচারিত ওআইসির বিবৃতিতেই বাংলাদেশের অবস্থান প্রতিফলিত হয়েছে। এই বিবৃতি যথার্থই বলেছে, ফিলিস্তিন প্রশ্নে ভবিষ্যতের কোনো শান্তি প্রচেষ্টায় মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালনে যুক্তরাষ্ট্র নিজেই নিজেকে অপ্রাসঙ্গিক করে তুলল। নিউইয়র্ক টাইমস–এর সম্পাদকীয়তেও তারই প্রতিফলন ঘটেছে। পত্রিকাটি মার্কিন নিরপেক্ষতার বিসর্জনে আক্ষেপ করে বলেছে, ট্রাম্প এত দিন শান্তির মহাপরিকল্পনার ধুয়া তুলে এখন তার ইসরায়েলি কৌশলগত পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যুক্তরাষ্ট্রের মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানকেই ব্যবহার করলেন।

আমরা বিষয়টিকে ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক বাতাবরণের চেয়ে অনেক বেশি দৃঢ়তার সঙ্গে মার্কিনরা কীভাবে তাদের সংকীর্ণ বিদেশনীতির স্বার্থে কী অবলীলায় গোটা আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা ও আইনের শাসনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাতে পারে, তার আরেকটি লজ্জাজনক দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচনা করতে চাই। ১৯৬৭ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত অর্ধ শতাব্দীতে নিরাপত্তা পরিষদে আল কুদস আল শরিফের মর্যাদা নির্ধারণ প্রশ্নে দশটি রেজল্যুশন পাস হয়েছিল এবং এর কিন্তু কেবলই মুসলিম অনুভূতির বিষয় নয়, অন্য ধর্মের সংবেদনশীলতার প্রশ্নও জড়িত রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান তাকে ভূলুণ্ঠিত করল।

বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর এই বিতর্কিত সিদ্ধান্তের অনুকূলে কোনো প্রতিনিধিত্বশীল আন্তর্জাতিক বা পশ্চিমা সম্প্রদায়ের সাহায্য–সমর্থন কুড়াতে সক্ষম হবেন বলে প্রতীয়মান হয় না। একদিকে ট্রাম্প তাঁর নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণ করার কথা বললেও এ বিষয়ে কোনো সংশয় নেই যে, কিছু প্রশ্ন সত্ত্বেও ফিলিস্তিন-ইসরায়েলি সংকটে যুক্তরাষ্ট্র যে এক মর্যাদাসম্পন্ন ও নির্ভরযোগ্য মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করে আসছিল, ১৪ মে তার কবর রচিত হলো।

দুই রাষ্ট্র ব্যবস্থায় আমরা যে সমাধানের আশায় দিন গুনছিলাম, তা আরও বেশি অনিশ্চিত হয়ে পড়ল, তবে সভ্যতা সুরক্ষার স্বার্থে এই সমাধান হতেই হবে। মার্কিন পদক্ষেপের কারণে বিশ্ববিবেক স্তব্ধ ও আন্তর্জাতিক আইন অন্ধ হয়ে যাবে না। এখন আশু শঙ্কা হলো, আরব ও মুসলিম বিশ্বের রাজপথ যদি ফুঁসে ওঠে, তাহলে বিশ্বের দেশে দেশে মার্কিন বিরোধিতা আরও বাড়তে পারে। ওআইসি জেরুজালেমে নতুন বিনিয়োগকারীদের ওআইসি মার্কেটে ঢোকা বন্ধ করার যে প্রস্তাব রেখেছে, তা যে অর্থহীন হুমকি নয়, তার প্রমাণ দিতে হবে। গাজায় যে সহিংস প্রতিবাদ, তা নিশ্চিতভাবেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের দায়িত্বহীন আচরণের প্রতিক্রিয়া। ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে অন্তত ৫৮ জনের প্রাণহানির জন্য যারা দায়ী, তাদের নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই।