শ্রমবাজার বড়, কিন্তু অনিরাপদ

অত্যন্ত অমানবিক অভিজ্ঞতা নিয়ে আমাদের নারী শ্রমিকদের সৌদি আরব থেকে ফিরে আসা অব্যাহতভাবে চলছে। শুধু নিষ্ঠুরতা ও যৌন নির্যাতন নয়, দরিদ্র পরিবারের এই নারীরা ফিরে আসছেন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েও। ফিরে আসার পথটাও সহজ বা নির্বিঘ্ন নয়, অনেক নারীকেই নিয়োগকর্তার বাড়ি থেকে পালিয়ে আসতে হচ্ছে, কাউকে কাউকে শরীরে আঘাতের চিহ্ন নিয়ে, মনে গভীর বেদনা, ক্ষোভ ও হতাশা নিয়ে।

গত শনি ও রোববার দুই দিনেই ফিরেছেন ৮৪ জন। গত জানুয়ারিতে সরকারের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড হিসাব দিয়েছিল, ৮ থেকে ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত মাত্র ছয় দিনেই নির্যাতনের শিকার হয়ে সৌদি আরব থেকে ফিরে এসেছেন ৩২৪ জন নারী গৃহশ্রমিক। আর রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যাচ্ছে, গত ২৯ মার্চ থেকে পরবর্তী এক মাসে ফিরে এসেছেন ৫০২ জন।

দরিদ্র পরিবারের এসব নারী সৌদি আরব গিয়েছিলেন এই আশায় যে সেখানে কাজ করে পরিবারের জন্য টাকা পাঠাবেন, স্বজনদের জীবনে একটু স্বাচ্ছন্দ্য আসবে। কেউ পোষা গরু-ছাগল বিক্রি করে, কেউ ধারকর্জ করে সৌদি আরব যাওয়ার টাকা জোগাড় করেছিলেন। কিন্তু যাঁরা ফিরে এসেছেন, তাঁদের সবাইকেই ফিরে আসতে হয়েছে কাজের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই। অধিকাংশই প্রতিশ্রুত অঙ্কের বেতন পাননি এবং যত দিন কাজ করেছেন তত দিনের বেতন পাননি। উপরন্তু শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। অর্থাৎ সৌদি আরবে আমাদের নারীদের গৃহকর্মী হিসেবে কাজে যাওয়া শুধু মানবিক দিক থেকে নয়, আর্থিক দিক থেকেও বিরাট ক্ষতির কারণ হয়েছে।

২০১৫ সালে সৌদি আরব ও বাংলাদশ সরকারের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে নারী গৃহকর্মী নেওয়ার বিষয়ে এক চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকে ৮৩ হাজারের বেশি নারী শ্রমিক সে দেশে গেছেন। কিন্তু সেখানে আমাদের নারীদের নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করা হয়নি। প্রতারণা, যৌন নির্যাতনসহ শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের কারণে প্রচুর নারীকে আর্থিক, শারীরিক-মানসিক দিক থেকে বিপর্যস্ত হয়ে দেশে ফিরে আসতে হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। এ ব্যাপারে আমাদের সরকারের কোনো তৎপরতা ফলপ্রসূ হয়নি।

গৃহকর্তাদের নির্যাতনে পালিয়ে আসা আমাদের নারীদের সাময়িকভাবে আশ্রয় দিতে রিয়াদের বাংলাদেশ দূতাবাসকে ‘সেফ হোম’ খুলতে হয়েছে। দূতাবাস কর্তৃপক্ষ সৌদি আরবে নারী গৃহশ্রমিক পাঠানো বন্ধ করতে সরকারের কাছে সুপারিশ পাঠিয়েছে, কিন্তু সরকার তা আমলে নেয়নি। কারণ, সরকারের নীতিনির্ধারকেরা ভাবছেন, এত বড় শ্রমবাজার ত্যাগ করা ঠিক হবে না। কিন্তু ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইনসহ অনেক দেশ সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় নারী গৃহকর্মী পাঠানো কয়েক বছর আগেই বন্ধ করে দিয়েছে।

সৌদি আরব বড় শ্রমবাজার হলেও গৃহকর্মী হিসেবে আমাদের নারীদের জন্য অনিরাপদ। তাঁদের পাঠানো বন্ধ করা হোক।