মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা

বাংলাদেশের মেয়েদের মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা পরিস্থিতি সম্পর্কে সোমবার প্রথম আলোয় যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, তা দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
মাসিক সচেতনতা দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের প্রায় সাড়ে ৪ কোটি কিশোরী ও নারী মাসিকের সময় এখনো কাপড় ব্যবহার করে। তাদের অনেকে একই কাপড় বারবার ব্যবহার করে। আবার নারী ও কিশোরীদের একটি বড় অংশ অপরিষ্কার কাপড় ব্যবহার করে। কিশোরীদের মাত্র ১০ শতাংশ এবং বয়স্ক নারীদের ২৫ শতাংশ মাসিকের সময় স্যানিটারি ন্যাপকিন বা স্বাস্থ্যসম্মত প্যাড ব্যবহার করে।

বোঝা যাচ্ছে, দেশের বিপুলসংখ্যক নারী এখনো স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। কেননা, স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, পুরোনো কাপড় বারবার ব্যবহার নারীকে নানা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলে। এতে মূত্রনালি ও জরায়ুতে সংক্রমণ হতে পারে। এসব সংক্রমণ থেকে জরায়ুর ক্যানসার হওয়ার বিপদও রয়েছে। এ ছাড়া পুরোনো, অপরিষ্কার কাপড় ব্যবহারের কারণে অতিরিক্ত রক্তপাতের আশঙ্কা থাকে।

মাসিকের সময় দেশের অনেক কিশোরী স্কুলে যায় না, এমনকি পরীক্ষায়ও অংশ নেয় না। কারণ, দেশের বেশির ভাগ স্কুল-কলেজের টয়লেট মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার উপযোগী নয়। টয়লেটগুলোতে কাপড় পরিবর্তন করার সুযোগ থাকে না এবং ব্যবহৃত ন্যাপকিন ফেলারও কোনো ব্যবস্থা থাকে না। অথচ স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতি ছয় ঘণ্টা অন্তর ন্যাপকিন পাল্টানো দরকার। তা না হলে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে এবং নানা রোগ দেখা দিতে পারে।

বয়ঃসন্ধিকালে মেয়েদের মাসিক হওয়াটা স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় একটি প্রক্রিয়া। কিন্তু এই একুশ শতকে এসেও মাসিক নিয়ে আমাদের দেশে এ নিয়ে যে রাখঢাক, তা পরিস্থিতিকে এতটা শোচনীয় করে রেখেছে। এ নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করার সময় হয়েছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, আমাদের দেশের শতকরা ৩৬ জন মেয়েই প্রথম মাসিকের আগে মাসিক সম্পর্কে জানে না। এ কারণে অনেক মেয়েকেই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। এ ক্ষেত্রে পরিবারের, বিশেষ করে মায়ের দায়িত্ব হচ্ছে তাঁর কিশোরী মেয়েকে এ সম্পর্কে জানানো। একই সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যাতে এ ব্যাপারে সচেতন ও সংবেদনশীল ভূমিকা পালন করে, সেই পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে। মাসিক নিয়ে যেসব কুসংস্কার আছে, সেগুলো দূর করে সবার মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ নিতে হবে। সরকারের উদ্যোগ, নীতি-সহায়তা ও সমর্থন ছাড়া পরিস্থিতি বদলানো কঠিন।

দরিদ্র নারীদের সুরক্ষা দিতেও সরকারকে বড় ভূমিকা রাখতে হবে। মাসিকের সময় পুরোনো কাপড় ব্যবহার করার একটি বড় কারণ হচ্ছে স্যানিটারি ন্যাপকিনের উচ্চমূল্য। স্বল্পমূল্যে কীভাবে দরিদ্র নারীদের জন্য ন্যাপকিন সহজলভ্য করা যায়, তা বিবেচনায় নিতে হবে। গ্রামীণ নারীদের স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারে উৎসাহিত করতে হবে।