দেশে কোনো মহাসড়ক নেই

সামছুল হক
সামছুল হক
পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সামছুল হক প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন দেশের বর্তমান মহাসড়ক-ব্যবস্থা, এর সমস্যা ও সমাধানের সম্ভাব্য পথ নিয়ে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এ কে এম জাকারিয়া


প্রথম আলো:
বাংলাদেশের মহাসড়কগুলো যানজটের কারণে দিনে দিনে কার্যত অচল হয়ে পড়ছে। সাধারণভাবে মহাসড়ক বলতে যা বোঝানো হয়, সেগুলো কেমন হওয়া উচিত? এর মূল চরিত্র কী?

সামছুল হক: মহাসড়ক বলতে সেই সড়ককে বোঝানো হয়, যেখানে উচ্চগতিতে এবং নিরবচ্ছিন্নভাবে গাড়ি চলতে পারবে। মহাসড়কগুলোতে প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত থাকবে, চাইলেই যেকোনো যানবাহন সেখানে প্রবেশ করতে পারবে না এবং এই সড়কে কোনো মোড় থাকতে পারবে না। মহাসড়কগুলোতে কোনো ধরনের নন–মোটর অ্যাকটিভিটিরও সুযোগ নেই।

প্রথম আলো: তাহলে তো বাংলাদেশে মহাসড়ক বলে কিছু নেই...

সামছুল হক: বিষয়টি দুর্ভাগ্যজনক, কিন্তু সত্যি হচ্ছে, বাংলাদেশে মহাসড়ক বলে কিছু নেই। এখানে দ্রুতগতিতে গাড়ি চলতে পারে, এমন কোনো সড়ক নেই এবং সড়কটি বাধাহীন বা নিরবচ্ছিন্ন নয়। অসংখ্য মোড় রয়েছে। মহাসড়কে বাসস্ট্যান্ড ও হাটবাজার রয়েছে। ফলে রাস্তা ভালো হলেও তা কোনোভাবেই মহাসড়ক নয়। মহাসড়ককে যদি আমার ধমনির সঙ্গে তুলনা করি, তবে এ ধরনের সড়কে অসংখ্য ব্লক রয়েছে। ব্লক মানেই চাপ তৈরি হবে। তবে দেশে কোনো মহাসড়ক নেই—এই তথ্যের চেয়েও ভয়ংকর বিষয় হলো, বর্তমান সড়কগুলোকেও মহাসড়কে রূপান্তর করার সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে গেছে ও যাচ্ছে। খুবই হতাশা নিয়ে বলতে হচ্ছে যে গত ৪৭ বছরে আমরা দেশে একটিও বাধাহীন মহাসড়ক তৈরি করতে পারিনি।

প্রথম আলো: আপনি বলতে চাইছেন, আমাদের বর্তমান মহাসড়কগুলোকে চাইলেও আমরা ভবিষ্যতে বাধাহীন ও দ্রুতগতির মহাসড়কে রূপান্তর করতে
পারব না?

সামছুল হক: বিদ্যমান সড়কগুলোকে প্রকৃত মহাসড়কে রূপান্তর করার সম্ভাবনা দিনে দিনে কমে যাচ্ছে। কারণ, এ জন্য প্রয়োজনীয় জমি রেখে দিতে হয়। আগেই বলেছি, মহাসড়ক মানে মোড় থাকতে পারবে না, সেটা আপনি যখনই করতে চাইবেন তার জন্য জমি লাগবে। আপনি এখন সেই কাজ না করলেও অন্তত জমি রেখে দিতে হবে। কিন্তু আমরা দেখছি, তা রাখা হচ্ছে না। আমরা বিজ্ঞান মেনে কাজ করছি না। এসব জায়গায় স্থাপনা হয়ে যাচ্ছে, ফলে কাজটি ভবিষ্যতের জন্য কঠিন এবং প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে।

প্রথম আলো: বর্তমানে নতুন করে যে সড়ক অবকাঠামো তৈরি হচ্ছে, সেখানেও কি এসব বিবেচনায় রাখা হচ্ছে না?

সামছুল হক: বর্তমানে যে ঢাকা-মাওয়া সড়ক হচ্ছে, তা একটি পূর্ণাঙ্গ মহাসড়ক হতে যাচ্ছে। এখানে দ্বিস্তরবিশিষ্ট সড়ক থাকবে। এই সড়কে কোনো
মোড় থাকবে না। যানবাহনের প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত থাকবে এবং স্থানীয় পর্যায়ের যান চলাচলের জন্য আলাদা রাস্তা থাকবে।

প্রথম আলো: আমাদের অনেক মহাসড়ক প্রশস্ত করা হয়েছে কিন্তু এরপরও মহাসড়কগুলো যে যানজটের চাপ ও বিশৃঙ্খলার মধ্যে রয়েছে, এর জন্য কি ব্যবস্থাপনার সমস্যা দায়ী নয়?

সামছুল হক: দেখুন, সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে গেলে তার উপযোগী কাঠামো তৈরি করতে হবে। আপনি মহাসড়ক বানাবেন, একে প্রশস্ত করবেন কিন্তু স্থানীয় চাহিদা বিবেচনায় রাখবেন না, তা হতে পারে না। আমাদের মহাসড়কে আইনগতভাবে নছিমন, করিমন বা ভটভটির মতো যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ। কিন্তু এগুলো চলবে কোথায়, সেই বিষয়কে তো বিবেচনার মধ্যে রাখতে হবে। আমাদের গ্রামীণ অর্থনীতিতে এর ভূমিকা রয়েছে। ফলে আপনি যত আইন বা কঠোর ব্যবস্থাপনাই নিশ্চিত করেন না কেন, তাতে নছিমন বা করিমনকে ঠেকাতে পারবেন না। এর সম্ভাবনাকে বিবেচনায় নিয়ে আপনাকে সেই অনুযায়ী অবকাঠামো তৈরি করতে হবে। ২০০৪ সালে একটি পাইলট প্রকল্প হিসেবে হাটিকুমরুল সড়ক করা হয়েছিল। সেটি করা হয়েছিল দ্বিস্তরবিশিষ্ট। দুই পাশে নিচের স্তরে স্থানীয় পর্যায়ের যানবাহন চলবে এবং মাঝে ওপরের স্তরে নিরবচ্ছিন্ন যানবাহন চলবে। এ রকম সড়ক তৈরি করা গেলে স্বাভাবিকভাবেই নছিমন বা করিমনের মতো যানবাহন এবং আমরা যাকে নন-মোটর অ্যাকটিভিটি বলি, অর্থাৎ রাস্তায় হাটবাজার, তা কখনো সড়ক বা মহাসড়কে বাধাগ্রস্ত করবে না।

প্রথম আলো: ২০০৪ সালের এই মডেল পরে বিবেচনায় নেওয়া হলো না কেন? ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এত অর্থ ও সময় ব্যয় করে চার লেন করা হলো, তখন তা বিবেচনায় নেওয়া হলো না কেন?

সামছুল হক: আমি মনে করি, এই মডেল অনুসরণ না করা একটি মারাত্মক ভুল। বিশেষ করে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক নিয়ে যা হয়েছে, তাকে আমি চরম অপেশাদারি কাজ বলে মনে করি। এত বড় একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজে যতটা পেশাদারি ও দূরদৃষ্টির প্রয়োজন ছিল, তার কিছুই ছিল না। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক আমাদের অর্থনীতির ধমনি হিসেবে বিবেচিত। এই সড়ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে অনেক কিছু বিবেচনায় নেওয়া উচিত ছিল। এটা শুধু সড়ক উন্নয়নের বিষয় নয়। এর সঙ্গে ভূমি উন্নয়নের বিষয়টিকেও বিবেচনায় নিতে হয়। সড়ক ও ভূমির সমন্বয় করতে হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে একটি অর্থনৈতিক করিডর হিসেবে বিবেচনা নিয়ে উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া। এই সড়কের দুই পাশে কী হবে অন্তত দুই পাশের দুই কিলোমিটারের মধ্যে কী করা যাবে বা যাবে না, সেগুলোও বিবেচনায় রাখা উচিত। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেন করা হয়েছে কিন্তু এসব কিছুই বিবেচনায় নেই বা নেওয়া হয়নি।

প্রথম আলো: ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক যে চার লেন হলো, তা কি আদৌ কোনো ফল দেবে? এই পথে যাতায়াতের সময় তো আগের তুলনায় বেড়েছে।

সামছুল হক: চার লেন বা সড়ক প্রশস্ত করার বিষয়টি খুব কাজে দেবে না। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে সত্যিকারের মহাসড়কের চরিত্র দিতে হলে উচিত ছিল তাকে দ্বিস্তরবিশিষ্ট রাস্তা করা, যে রাস্তায় কোনো মোড় থাকবে না। যানবাহন প্রবেশ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা রাখা এবং সড়কের পাশের ভূমি ব্যবস্থাপনার বিষয়টি মাথায় রাখা। তা যেহেতু হয়নি, তাই এই খাতে অর্থ বিনিয়োগ হলে সেখান থেকে সুফল মিলবে না। শুরুতেই চার লেন করার উদ্যোগ না নিয়ে বরং এই সড়কের অন্তত ২০টি মোড় ট্রিটমেন্ট করে বাধাহীন করার উদ্যোগ নিলেও সুফল পাওয়া যেত। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এই মোড়গুলোর জায়গা খালি বা অব্যবহৃত রাখারও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। এসব জায়গায় বাড়ি, মার্কেট ও বড় বড় স্থায়ী অবকাঠামো হয়ে যাচ্ছে। ফলে ভবিষ্যতে সমাধানের সুযোগও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অজ্ঞতা ও দূরদৃষ্টির অভাবে আমরা ভবিষ্যতের সুযোগও নষ্ট করে ফেলছি। কাঁচপুর ব্রিজের পর যে জংশনটি আছে, যেখান থেকে সিলেট ও চট্টগ্রামের দিকে সড়কগুলো গেছে, সেখানে মোড়গুলো ঘেঁষে বড় বড় স্থাপনা হয়ে যাচ্ছে অথচ এখানে ঢাকার কুড়িলের মতো একটি উড়াল জংশন দরকার, যাতে সব দিকে যানবাহন বাধাহীনভাবে চলতে পারে। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও দূরদৃষ্টিহীনতার কারণে এই মোড়কে ঘিরে জায়গা অব্যবহৃত রাখা হচ্ছে না। ফলে ভবিষ্যতে কিছু করতে চাইলেও তা করা যাবে না। কোনো দাওয়াই কাজ করবে না।

প্রথম আলো: ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেন হলো কিন্তু দেখা যাচ্ছে মেঘনা, দাউদকান্দি ও কাঁচপুর সেতু দুই লেন রয়ে গেল। চার লেনের পরিকল্পনা করার সময় কেন বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হলো না?

সামছুল হক: সেই একই কথা বলতে হয়। এটা হচ্ছে মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দূরদর্শিতা ও দূরদৃষ্টির অভাব এবং অপেশাদারি মনোভাবের প্রকাশ। পেশাদারি লোকজন যখন কোনো পরিকল্পনা করেন, তখন সামনে কী হতে পারে, তা বিবেচনায় নিয়ে কাজ করেন। অর্থাৎ ঘটনা ঘটার আগেই বিষয়গুলো মাথায় থাকতে হবে। ঘটনা ঘটার পর জানেন অপেশাদারি লোকজন। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেন করার আগে যে এই ব্রিজগুলোকেও চার লেন করতে হবে, তা অন্তত ২০ বছর আগে ভাবা উচিত ছিল। হোঁচট খেয়ে যে উন্নয়ন তা শেষ হতে হতে নতুন চাহিদা তৈরি হয়। ফলে কোনো সুফল মেলে না।

প্রথম আলো: ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়ক চার লেন হয়েছে, ঢাকা-টাঙ্গাইল হচ্ছে, ঢাকা-সিলেটের কথা শোনা যাচ্ছে। এগুলোর কী অবস্থা? নতুন করে একই ভুল বা সর্বনাশ ঠেকানোর পথ কী?

সামছুল হক: ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক ছাড়া বাকি চার লেন প্রকল্পগুলো আগের মতো করেই হচ্ছে। এগুলো থেকে ফল পাওয়া কঠিন। আগেই বলেছি, মহাসড়কের চরিত্র নিশ্চিত করতে হলে সাধারণ শর্তগুলো নিশ্চিত করতে হবে। মনে রাখতে হবে, একটি কার্যকর মহাসড়ক শুধু রাস্তা চওড়া করার ওপর নির্ভর করে না। একে বাধাহীন রাখতে হবে এবং সে জন্য প্রয়োজনীয় সব অসংগতি দূর করতে হবে। এখন সব করা না গেলেও ভবিষ্যতের জন্য জায়গা রেখে দিতে হবে। কিন্তু এসব না করতে পারার ব্যর্থতা আমাদের জন্য অশনিসংকেত। আমরা যে উন্নত দেশের স্বপ্ন দেখছি, তার সঙ্গে আমাদের বর্তমান সড়ক অবকাঠামো কোনোভাবেই যায় না। উন্নত দেশের দিকে যাত্রার একটি অন্যতম বড় শর্ত উন্নত ও কার্যকর যোগাযোগব্যবস্থা।

প্রথম আলো: আপনি কি মনে করেন, আমাদের সরকারের কাছে যোগাযোগ একটি উপেক্ষিত খাত?

সামছুল হক: যোগাযোগ খাতে বড় বড় অবকাঠামো তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তা পরিকল্পিতভাবে বা বিজ্ঞানসম্মতভাবে হচ্ছে না। ফলে এর সুফল কাজে লাগানো কঠিন হচ্ছে।

প্রথম আলো: এ রকম কেন হচ্ছে?

সামছুল হক: বর্তমান সরকারের অর্জন অনেক। বিদ্যুৎ খাতের কথা ধরুন, এ নিয়ে আমাদের অর্থনীতি ধুঁকছিল। সরকার সে খাতে নজর দিয়েছে জোরালোভাবে। ফলে সেই সংকট অনেকটাই কাটানো গেছে। একজন পরিবহন বিশেষজ্ঞ হিসেবে আমি বলতে পারি, অর্থনীতি বা উৎপাদনের জন্য বিদ্যুৎ যেমন লাগে, তেমনি সাশ্রয়ী ও দ্রুতগতির অবকাঠামো না থাকার কারণে যদি পণ্যের চলাচল যথাযথভাবে নিশ্চিত করা না যায়, তবে এর সুফলটি পাওয়া যায় না। মানে, বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগের সুফল আমরা যোগাযোগ খাতের সমস্যার জন্য হারাচ্ছি। দুর্বল ও ধীরগতির মহাসড়ক দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরণ কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

প্রথম আলো: আপনি বললেন, সরকার বিদ্যুৎ খাতে নজর দিয়েছে এবং এর সুফল পাওয়া গেছে। বিদ্যুৎ এবং পরিবহন ও যোগাযোগ খাত—এই দুটির মধ্যে কোনটিকে আপনি গুরুত্বের দিক থেকে এগিয়ে রাখবেন?

সামছুল হক: অর্থনীতির জন্য বিদ্যুৎ খাত অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু যোগাযোগ খাত সরকারের কাছে বেশি গুরুত্ব পাওয়া উচিত। কারণ, এই খাতে সরকার ছাড়া কারও তেমন কিছু করার থাকে না। বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয়বহুল হলেও বেসরকারি খাতের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। কিন্তু যোগাযোগ অবকাঠামো ও ব্যবস্থা তৈরির ক্ষেত্রে রাষ্ট্র ছাড়া কারও কিছু করার তেমন সুযোগ নেই। আর বিষয়টি দীর্ঘমেয়াদি এবং হুট করে একে সাজানো যায় না। দেশে আধুনিক বন্দর তৈরি হলেও তা কোনো কাজে দেবে না, যদি সেখানে যাওয়ার জন্য বাধাহীন সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা না থাকে। বর্তমান প্রকল্পসর্বস্ব উন্নয়নকে সামগ্রিকভাবে ব্যবস্থার উন্নয়নের দিকে নিয়ে যেতে হবে। সেখানে বড় ঘাটতি রয়ে গেছে।

প্রথম আলো: সরকার এ ক্ষেত্রে কী ধরনের উদ্যোগ নিতে পারে?

সামছুল হক: যোগাযোগ ও পরিবহন এত বড় ও গুরুত্বপূর্ণ একটি খাত, অথচ দেখুন এই খাতের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কোনো পরামর্শক বা পরামর্শক পরিষদ নেই। সরকারের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা আছে, তথ্য উপদেষ্টা আছে, ব্যবসা বিষয়ে পরামর্শ দেওয়ার উপদেষ্টা থাকলেও এই খাত উপেক্ষিত। আমি মনে করি, উন্নয়নে যৌক্তিক করার জন্য দেশ-বিদেশের পরিবহন বিশেষজ্ঞদের নিয়ে সরকার থিংকট্যাংক ধরনের কিছু করতে পারে। পরামর্শক দল হিসেবে তারা সরকারকে পরামর্শ দেবে। সার্বক্ষণিকভাবে বিষয়টি দেখার জন্য প্রধানমন্ত্রীর এই বিষয়ক একজন থাকা উচিত।

প্রথম আলো: ঈদ আসছে। দেশের সড়ক ও মহাসড়কগুলোতে চাপ বাড়বে। কয়েক বছর ধরে বাড়ি ফেরা নিয়ে জনগণ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। ঈদ সামনে রেখে পরিস্থিতি সহনীয় রাখতে আপনার কোনো পরামর্শ আছে কি?

সামছুল হক: উৎসবের সময় বিশ্বের সব দেশেই যানবাহনের বাড়তি চলাচলের কারণে চাপ বাড়ে। আমাদের দেশের যে সংস্কৃতি, তাতে বাড়ি যাওয়ার চাপ তৈরি হয়। এটা স্বাভাবিক পরিস্থিতি নয়। গত কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে, ঈদের সময় যানবাহন ব্যবস্থাপনার জন্য জনবল যথেষ্ট তৎপর থাকে। এবারও নিশ্চয় থাকবে। তবে বৃষ্টি হলে বিপদ। এ ক্ষেত্রে যেদিকে মনোযোগ দিতে হবে, তা হচ্ছে কোনোভাবেই যেন রাস্তায় পানি না জমে। স্থানীয়ভাবে প্রশাসন এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগকে এ ব্যাপারে তৎপর থাকতে হবে। কোথাও পানি জমলে মাটি কেটে পানি বের করে দিতে হবে অথবা ছোট বহনযোগ্য পাম্পের মাধ্যমে পানি সরিয়ে ফেলতে হবে। তবে ঈদের সময় মহাসড়কে ছোট যানবাহন চলাচল বন্ধ করতে পারলে সবচেয়ে ভালো হয়। কত গাড়ি রাস্তা দিয়ে চলল, সেই বিবেচনার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো কত মানুষের পরিবহন নিশ্চিত করা যাচ্ছে। ব্যক্তিগত গাড়িতে করে বাড়ি যাওয়ার বিষয়টি বন্ধ করতে পারলে খুব ভালো হতো। আসলে জনস্বার্থে কিছু অজনপ্রিয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে সরকারকে প্রস্তুত থাকতে হবে। মহাসড়কেও ডাবল ডেকার বাস চলাচল উৎসাহিত করার নীতি সরকারকে নিতে হবে।

প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ।

সামছুল হক: আপনাকেও ধন্যবাদ।