কৃষিতে নারীর অংশগ্রহণ

২০১৬ সালের সিএসআরএলের (ক্যাম্পেইন ফর সাসটেইনেবল রুরাল লাইভলিহুড) প্রতিবেদন অনুযায়ী, কৃষি খাতের ২১ ধরনের কাজের মধ্যে ১৭ ধরনের কাজেই গ্রামীণ নারী অংশগ্রহণ করে থাকেন। ফসলের প্রাক্-বপন-প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে ফসল উত্তোলন, বীজ সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ, বিপণনের অনেক কাজ নারী এককভাবে করেন। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এর স্বীকৃতি নেই বললেই চলে। কৃষিকাজকে নারীর প্রাত্যহিক কাজের অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কৃষিকাজে নিয়োজিত নারীকে ঘরের কাজও করতে হয়, কিন্তু পুরুষকে তা করতে হয় না।

এ কঠিন বাস্তবতার মধ্যেও ইন্টারন্যাশনাল ফুড রিসার্চ ইনস্টিটিউট কিছুটা আশার বাণী শোনাল। চার হাজার পরিবারের ওপর পরিচালিত সংস্থাটির সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রশিক্ষণ পেলে নারী কৃষকেরা পুরুষ কৃষকদের চেয়ে অনেক ভালো করেন। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পুরুষ কৃষকদের মধ্যে সবজি চাষে উন্নতি করেছেন ২২ শতাংশ, কীটনাশক ও রোগ প্রতিরোধে ভালো উপকরণ ব্যবহারে ২৭ শতাংশ, ভালো বীজ ব্যবহারে ২৩ শতাংশ। অন্যদিকে একই প্রশিক্ষণ নিয়ে নারী কৃষকেরা উন্নতি করেছেন যথাক্রমে সবজি উৎপাদনে ৪৮ শতাংশ, কীটনাশক ও রোগ প্রতিরোধ সামগ্রীর ব্যবহারে ৪৩ শতাংশ ও ভালো বীজ ব্যবহারে ৪০ শতাংশ। আর পুষ্টি ও কৃষি উৎপাদন উভয় বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়া নারীরা ভালো করেছেন ৫৭ শতাংশ।

উল্লেখ্য, বর্তমান সরকার নারী কৃষকদের উন্নয়নে বেশ কিছু পদক্ষেপও নিয়েছে; যার মধ্যে রয়েছে সরাসরি নারী কৃষকদের মধ্যে কৃষি উপকরণ ও সরকারি সুযোগ-সুবিধা পৌঁছে দেওয়া। ‘কৃষাণী’ হিসেবে ১২ লাখ ৫৮ হাজার ৬৪৭ জন নারী এ কার্ড পাচ্ছেন। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কারে নারীদের আলাদা ক্যাটাগরি রাখা হয়েছে। কিন্তু সামাজিক, পারিবারিক ও মনস্তাত্ত্বিক বাধাটি রয়েই গেছে। কৃষিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে হলে মজুরিবৈষম্য দূর করার পাশাপাশি এসব বাধা দূর করতেই হবে।