এমপিওভুক্তির আন্দোলন

সারা দেশে নন–এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা ৮০ হাজার। কিন্তু এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লাখ লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে এবং কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ভালো ফলও করছে। বাংলাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হওয়া না-হওয়া অনেকটা রাজনৈতিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জড়িত থাকেন, ভালো ফল না করা সত্ত্বেও সেগুলো দ্রুত এমপিওভুক্ত হয়ে যায়। আবার তদবিরের জোর না থাকায় ভালো ফল করেও অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হতে পারেনি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের সময়ও এ রকম অনিয়ম ও পক্ষপাত লক্ষ করা যায়।

 নন–এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা এমপিওভুক্তির দাবিতে গত ডিসেম্বরেও জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান ধর্মঘট পালন করেছিলেন। কয়েক দিন অবস্থান ধর্মঘট চলার পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক কর্মকর্তার আশ্বাসে শিক্ষকেরা সেই কর্মসূচি স্থগিত করেন। তাঁদের প্রত্যাশা ছিল, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে তাঁদের এমপিওভুক্ত করা হবে। কিন্তু অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় এ বিষয়ে কোনো বরাদ্দ না থাকায় শিক্ষকেরা নতুন করে কর্মসূচি নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তা যখন শিক্ষকদের দাবি-দাওয়া বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন, তখন শিক্ষকেরা ধরে নিতে পারেন যে বিষয়টিতে সর্বোচ্চ মহলের সম্মতি আছে। এরপরও শিক্ষকেরা ছয় মাস অপেক্ষা করেছেন।

শিক্ষা, শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে সরকারের নীতি স্ববিরোধী, একপেশে ও বৈষম্যমূলক। সরকার একদিকে দাবি না থাকা সত্ত্বেও অনেক বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করেছে। অথচ নন–এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকেরা ন্যূনতম বেতন-ভাতাও পাচ্ছেন না। আবার কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাকরি নিতেও তাঁদের মোটা অঙ্কের উৎকোচ দিতে হয়। দীর্ঘদিন বেতন–ভাতা না পাওয়ায় অনেক শিক্ষক পরিবার–পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হন। এ অবস্থায় তাঁরা কীভাবে শিক্ষার্থীদের পড়াবেন?

অতএব, নন–এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে অবিলম্বে এমপিওভুক্ত করে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের রক্ষা করুন। শিক্ষকেরা না বাঁচলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিংবা শিক্ষা, কোনোটিই রক্ষা করা যাবে না। শিক্ষামন্ত্রী রোজার দিনে কষ্ট করে আন্দোলন না করার জন্য শিক্ষকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। শিক্ষকেরাও তাঁকে পাল্টা অনুরোধ জানাতে পারেন, তাঁদের দাবিদাওয়াটুকু সরকার মেনে নিক। তাহলে আর রাস্তায় আন্দোলন করতে হবে না। বেতন-ভাতার দাবিতে জাতির ভবিষ্যৎ কারিগর হিসেবে পরিচিত শিক্ষকদের যদি বারবার রাজপথে নামত হয় কিংবা সরকারের কাছে ধরনা দিতে হয়, তার চেয়ে লজ্জার আর কী থাকতে পারে?