মাটির ঘরে বিদ্যুতের আলো

গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ–সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার অঙ্গীকারে ১৯৭৮ সালে খুব সীমিত লোকবল ও অবকাঠামো নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। সেই প্রতিষ্ঠান এখন আকারে-প্রকারে অনেক বড় হয়েছে। সমিতি ও সেবাপ্রার্থীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। তবে সার্বিক বিচারে সেবার মান বেড়েছে বলে মনে হয় না। গণমাধ্যমে প্রায়ই বিভিন্ন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অনিয়ম-দুর্নীতির খবর প্রকাশ পায়।

তবে সেসব খবর ছাপিয়ে আমাদের মনোযোগ কেড়েছে ২৫ জুন প্রথম আলোর সিলেট সংস্করণে মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ছোট্ট খবরটি। প্রথম আলোর মৌলভীবাজার প্রতিনিধির পাঠানো খবরটির সারমর্ম হলো, মাস চারেক আগে মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বড়লেখা জোনাল অফিস মোহাম্মদনগর এলাকার প্রতিটি বাড়িতে বিদ্যুৎ–সংযোগ দিলেও বাদ পড়ে যায় একটি মাটির ঘর; যেখানে বাস করেন দিনমজুর আবদুন নূর ( ৭৫) ও তাঁর স্ত্রী পিয়ারা বেগম (৬৫)। দরিদ্র পরিবারটির পক্ষে টাকা দিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সদস্য হওয়া কিংবা বিদ্যুতের লাইন নেওয়া সম্ভব হয়নি।

প্রকাশিত খবরে আরও জানা যায়, বিদ্যুৎ অফিসের লাইনম্যান রেজাউল করিম কাজের তত্ত্বাবধান করতে প্রায়ই মোহাম্মদনগরে যান। কোথাও লাইন খারাপ হলো কি না, পরখ করে দেখেন। সেটা তাঁর পেশাগত দায়িত্বও। একদিন এলাকায় যেতে পিয়ারা বেগম তাঁর কাছে আক্ষেপ করেন, গ্রামের অন্য সবার বাড়িতে বিদ্যুতের আলো জ্বললেও একমাত্র তাঁদের ঘরটিই অন্ধকারে। বৃদ্ধার আফসোস ও আকুতি লাইনম্যান রেজাউলকে স্পর্শ করে। তিনি আবদুন নূর ও পিয়ারা বেগমকে না জানিয়েই তাঁদের নামে সমিতির কাগজপত্র তৈরি করেন এবং নির্ধারিত চাঁদাও পরিশোধ করেন। এরপর ১৩ জুন তিনি এক সহকর্মীসহ বিদ্যুতের তার, মিটার, বাল্ব ইত্যাদি নিয়ে রেজাউল করিম ও এক সহকর্মী আবদুন নূর-পিয়ারা বেগমের বাড়িতে হাজির হলে কী আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়, তা অনুমান করা কঠিন নয়। সুইচ টিপতেই পিয়ারা বেগমের মাটির ঘরে আলো জ্বলে ওঠে। আবদুন নূর ও পিয়ারা বেগমের জীবনে এটাই ছিল শ্রেষ্ঠ ঈদ।

যেখানে অধিকাংশ সরকারি কর্মকর্তা বিধিবদ্ধ দায়িত্ব পালন করেন না, সেখানে লাইনম্যান রেজাউলের দৃষ্টান্ত অনুসরণীয় হয়ে থাকবে। তাঁর ওপর যে সরকারি দায়িত্ব, তিনি তার চেয়ে বেশি কিছু করেছেন। একজন ব্যক্তির সামান্য একটি উদ্যোগই পরিবর্তনের পথ দেখাতে পারে, একটি প্রতিষ্ঠানকে সম্মান ও স্বীকৃতি এনে দিতে পারে। সমাজে এমন দৃষ্টান্ত অনুসরণের চর্চা শুরু হলে অনেক কিছুই বদলে যেতে পারে। আমাদের সরকারি সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে রেজাউল করিমদের সংখ্যা বাড়ুক। মানুষ সেবা পাক।