নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা

নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিতে ১৮০ দিনের একটি সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তার উদ্দেশ্য বছরের পর বছর উপেক্ষিত থেকেছে। না সরকার, না হাইকোর্ট বিভাগ কেউ এই বিশেষ বিধানের লঙ্ঘনের প্রতিরোধে সোচ্চার হয়নি। এর ফলে বিস্ময়করভাবে নীরবে–নিভৃতে সংশ্লিষ্ট আইনের ব্যত্যয় ঘটেছে। আইন বলেছে, ট্রাইব্যুনালে কোনো মামলা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি না হলে তার ‘কারণ’ চিহ্নিত করে তা সুপ্রিম কোর্টকে জানাতে হবে। এত দিন যেটা চলছিল, সেটা হলো নিষ্পত্তি না হওয়ার বিষয়টি অনেকটা যান্ত্রিকভাবে সুপ্রিম কোর্টকে জানানো হতো, কিন্তু তাতে ব্যক্তির দায় উল্লেখ থাকত না। এর অনিবার্য ফল হলো জবাবদিহির মৃত্যু।
হাইকোর্ট যথেষ্ট বিলম্ব সত্ত্বেও প্রায় দেড় বছর আগে এই বিষয়টির নিরসনে একটি তদারকি সেল গঠনের নির্দেশনা দিয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সংশ্লিষ্টরা তা তামিল করতে বিরত থাকছিলেন। ১১ জুন প্রধান বিচারপতি সেল গঠন অনুমোদন দিয়েছেন।
এই রূঢ় বাস্তবতা নির্দেশ করে যে নারী ও শিশু নির্যাতন দমনে দেশের
নির্বাহী বিভাগ ও আইনসভা সুচিন্তিতভাবে যে গুরুদায়িত্ব বিচার বিভাগের কাঁধে তুলে দিয়েছিল, সেটা তারা পালন করতে পারেনি। আর সে কারণে এর আগে প্রথম আলোর একদল অনুসন্ধানী সাংবাদিক তথ্য উদ্‌ঘাটন করেছিলেন যে নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সাজা লাভের হার ৩ শতাংশের কম।
কোনো সন্দেহ নেই যে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে বিচারহীনতা সমাজে নারী ও শিশুর বিরুদ্ধে সহিংসতাকে আরও উসকে দিচ্ছে। অপ্রিয় সত্য হলো ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা পেল কি না, সেটা দেখার কেউ নেই, নারী নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়েরের সংখ্যাধিক্যই যেন একটি পরিহাসমূলক সান্ত্বনা। এই মুহূর্তে ১ লাখ ৬৫ হাজার মামলা বিচারাধীন। কিন্তু কারও জানা নেই, এই মামলাগুলো কত দিনে শেষ হবে। আইন বলছে, এগুলো ১৮০ দিনের মধ্যে শেষ হবে।
কিন্তু মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো এবং মৌলিক পূর্বশর্তগুলো সরকার পূরণ করেছে, তেমন দাবি অচল। আইনে ব্যর্থতার কারণ বা দায় নির্দেশ করতে বিচারক, পুলিশ ও প্রসিকিউটরদের আলাদা প্রতিবেদন দেওয়ার সুযোগ তৈরি করেছে। কিন্তু ব্যবস্থা নিতে বলেছে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে। আইনটি করার ১৮ বছরে কারও মনে হয়নি যে কারা যথাযথ কর্তৃপক্ষ তারই কানো সংজ্ঞা নেই।
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বিভাগ বেঞ্চ ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে ‘যথাযথ কর্তৃপক্ষ’ বলতে সুপ্রিম কোর্ট, আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বোঝাবে বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু আমরা মনে করি, ট্রাইব্যুনালের ওপর তদারকিই সবচেয়ে বেশি কার্যকর ও বাস্তবসম্মত হবে। আর সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদ অনুসারে তা শুধু হাইকোর্ট বিভাগের ওপরই ন্যস্ত।