একটি প্রতীক্ষিত সিদ্ধান্ত

এখন থেকে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সরকারি তহবিলের প্রথম ও দ্বিতীয় কিস্তির বরাদ্দ প্রকল্পের পরিচালকেরাই (পিডি) ছাড় করতে পারবেন। সংশোধিত পদ্ধতিতে উন্নয়ন প্রকল্পের প্রথম ও দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ ব্যবহারের ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় বা বিভাগ থেকে বিভাজন আদেশ জারি এবং অর্থ ছাড় করার প্রয়োজন হবে না। এই সিদ্ধান্ত দীর্ঘসূত্রতা দূর করে প্রকল্পের কাজে গতিশীলতা আনতে সহায়তা করবে বলে আমরা মনে করি।
উল্লেখ্য, গত অর্থবছর পর্যন্ত প্রকল্পের অর্থ ছাড় করাতে প্রকল্পের প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের প্রয়োজনীয় অনুমোদন নিতে হতো। প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন মানে সচিবের স্বাক্ষর গ্রহণ। কাগজে-কলমে এটা একটি আনুষ্ঠানিকতা হলেও খুব কম ক্ষেত্রেই সময়মতো অর্থ ছাড়ের ঘটনা ঘটত। আমলাতান্ত্রিক-প্রক্রিয়ায় সবুজ কালির সেই সোনালি স্বাক্ষর সংগ্রহের একটা ধারাবাহিকতা আছে। উপ, যুগ্ম, অতি—নানা পদের কর্মকর্তাদের মতামত, পর্যবেক্ষণ, সুপারিশ ইত্যাদিতে সমৃদ্ধ হয়ে তা সচিব মহোদয়ের টেবিলে যায়। এসব করতে গিয়ে কিস্তি ছাড়ের অনুমোদনের ফাইল পৌঁছাতে কখনো তিন মাস, কখনো ছয়-সাত মাস, এমনকি বছরও কাবার হয়ে যেত।
সমস্যা আরও আছে। কিস্তি ছাড়ের অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সময়মতো ‘খুশি’ করা ও খুশি রাখার অনৈতিক চর্চা যেন এক স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত হয়েছিল। অর্থ ছাড় না হওয়া পর্যন্ত প্রকল্পের কর্মীদের বেতন বন্ধ থাকার কারণে নিরুপায় কর্মীদের আক্ষরিক অর্থে উপোস এড়ানোর জন্য ‘খুশি করার’ অনৈতিক পথে হাঁটা ছাড়া আর কোনো বিকল্প থাকত না। এসবের ফাঁদে পড়ে প্রকল্পের কাজ বিলম্বিত হতো মাসের পর মাস। কখনো ‘ম্যানেজ’ করতে না পারলে কেটে যেত বছর।
অন্যদিকে অর্থ ছাড়ের অনুমোদন-প্রক্রিয়ায় হারিয়ে যাওয়া সময় সমন্বয় করতে গিয়ে শেষ দিকে অনেকটা বাধ্য হয়ে তড়িঘড়ি করে উন্নয়ন প্রকল্পের গুণগত মান নিশ্চিত না করেই টাকা খরচ করতে হতো। তারপরও অনেক ক্ষেত্রে সময়মতো প্রকল্পের সব টাকা খরচ হতো না। বাজেট ও উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্য অর্জন পিছিয়ে পড়ত। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, সদ্যবিদায়ী ২০১৭–১৮ অর্থবছরে ৩ লাখ ৭১ হাজার কোটি টাকার সংশোধিত বাজেটের মধ্যে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ছিল ১ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা। শেষ পর্যন্ত খরচ হয়েছে এই সংশোধিত এডিপির ৯৩ দশমিক ৭১ শতাংশ বা ১ লাখ ৪৭ হাজার ৭০৩ কোটি টাকা। িবগত ১৭ বছরের মধ্যে কোনো অর্থবছরেই সংশোধিত এডিপির পুরো টাকা খরচ করা সম্ভব হয়নি। এ িদকে শুরু হওয়া চলতি অর্থবছরে বাজেটের আকার ৪ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এডিপিতে খরচ হবে ১ লাখ ৮১ হাজার কোটি টাকা। এই টাকা খরচে এখন শর্ত িশথিল করা হলো।
বাজেট বাস্তবায়নে সক্ষমতা ফিরিয়ে আনার জন্য জারিকৃত নতুন এ নির্দেশনা শুরু হওয়া ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম দিন থেকে অর্থাৎ ১ জুলাই থেকে কার্যকর হয়েছে। সংশোধিত পদ্ধতিতে ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে কিস্তির পরিবর্তে এককালীন অর্থ ছাড় করা যাবে, আগে এটা কিস্তিভিত্তিক করার রেওয়াজ ছিল। পরিপত্রে বলা হয়েছে, অর্থবছরের শুরুতে প্রকল্পের কার্যক্রম শুরুর মাধ্যমে বাস্তবায়ন গতিশীল করতে সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা এবং প্রকল্প পরিচালকদের আরও ক্ষমতা দিতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে অর্থবছরের শেষে তড়িঘড়ি করে অর্থ ব্যয় নিরুৎসাহিত হবে।
নতুন এই কার্যপদ্ধতি প্রকল্প তথা বাজেট বাস্তবায়নের গতিকে আরও বেগবান করবে বলে আমরা আশা করি।