জলাবদ্ধতা দূর করতে না পারাই ব্যর্থতা: আ জ ম নাছির

আ জ ম নাছির উদ্দীন
আ জ ম নাছির উদ্দীন
>

২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে জয়লাভ করেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন। ওই বছরের ২৬ জুলাই মেয়রের দায়িত্ব নেন তিনি। আজ বৃহস্পতিবার দায়িত্ব গ্রহণের তিন বছর পূর্ণ হয়েছে। এ নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেন আ জ ম নাছির উদ্দীন । সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সুজন ঘোষ

প্রথম আলো: দায়িত্ব গ্রহণের তিন বছর পূর্ণ করলেন। আপনি নিজে কতটুকু সন্তুষ্ট?

জ ম নাছির উদ্দীন: এখানে দুটি বিষয় আছে। একটি হচ্ছে, আমি নিজে কী ধারণা করছি। আরেকটি হচ্ছে, আমার কাজ নিয়ে জনগণ কী মত পোষণ করছেন। তবে আমি মনে করি, আমি সঠিক পথেই এগোচ্ছি। যে অবস্থায় দায়িত্ব নিয়েছি, এখন যে অবস্থায় করপোরেশন এসেছে—এই বিবেচনায় বলতে পারি সঠিকভাবে নাগরিক সেবা দিতে পেরেছি। তবে জনগণই চুলচেরা বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেবেন, আমি কতটা সফল।

প্রথম আলো: নির্বাচনী ইশতেহারে আপনার প্রধান অঙ্গীকার ছিল নগরের জলাবদ্ধতা দূর করা। কিন্তু এখনো নগরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে...

নাছির উদ্দীন: জলাবদ্ধতা নিয়ে এখন সিটি করপোরেশনের কাছে প্রত্যাশা করার সুযোগ নেই। করপোরেশনকে দায়ীও করা যাবে না। কেননা, এই সমস্যা নিরসনে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সিডিএ (চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ)। তাই এ ক্ষেত্রে সব দায়দায়িত্ব সিডিএর।

প্রথম আলো: সিডিএর প্রকল্প পাস হয় গত বছরের আগস্টে। এর আগে আপনি দুই বছর সময় পেয়েছিলেন। কী করেছিলেন তখন?

নাছির উদ্দীন: এটি দীর্ঘদিনের সমস্যা। রাতারাতি সমাধান করা সম্ভব নয়। তাই দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই জলাবদ্ধতা সমস্যা দূর করার জন্য স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন উদ্যোগ নিই। চীনের একটি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। তারা প্রায় এক বছর কাজ করে। এরপর প্রকল্প তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু এর মধ্যে সিডিএ তড়িঘড়ি করে একটি প্রকল্প তৈরি করে, যা গত বছর একনেকে অনুমোদন পায়।

প্রথম আলো: তিন বছরের মধ্যে কোনটিকে বড় ব্যর্থতা মনে করেন?

নাছির উদ্দীন: জলাবদ্ধতা সমস্যা নিয়ে নগরবাসীর মধ্যে অসন্তোষও ছিল। তাই নির্বাচনের সময় অঙ্গীকার করেছিলাম, এই সমস্যা নিরসনে কার্যকর ভূমিকা রাখব। নগরবাসীকে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি দিতে না পারা আমার ব্যর্থতা বলব। আমি কিন্তু চেষ্টা করেছি। কঠিন এ সমস্যা দূর করার চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলাম। কাজও শুরু করি। নগরবাসীও আস্থা রেখেছিলেন। কিন্তু অন্য একটি সংস্থার প্রকল্প অনুমোদন পাওয়ায় আমাকে বাধ্য হয়ে সরে আসতে হয়েছে। জলাবদ্ধতা থেকে নগরবাসীকে মুক্তি দিতে পারলে ভালো লাগত। তাই করতে না পারার আক্ষেপ থাকবে।

প্রথম আলো: প্রতিদিন বিভিন্ন সভা-সমাবেশে অংশ নেন। করপোরেশনের কার্যক্রমে কেমন প্রভাব পড়ছে?

নাছির উদ্দীন: সভা-সমাবেশে অংশ নিলেও আমার কার্যালয়ে কোনো ফাইল পড়ে থাকে না। দিনের কাজ দিনেই শেষ করি। বরং এসব সভা-সমাবেশে করপোরেশনের কার্যক্রমের কথা বলি। নগরবাসীকে সচেতন করার চেষ্টা করি।

প্রথম আলো: নগরের দুই গুরুত্বপূর্ণ সড়ক বেহাল (আগ্রাবাদ অ্যাকসেস রোড ও পোর্ট কানেকটিং রোড)। সড়ক সংস্কারের কী অবস্থা?

নাছির উদ্দীন: সড়ক দুটির উন্নয়নকাজ চলছে। ২০১৯ সালের মে মাস পর্যন্ত মেয়াদ আছে। এর মধ্যেই কাজ শেষ হবে। আর নগরের অন্য সড়কগুলো সংস্কার করার জন্য অত্যাধুনিক অ্যাসফল্ট প্ল্যান্ট বসানো হয়েছে। তাই সংস্কারকাজের মানও বেড়েছে। আমার মেয়াদের মধ্যে নগরের সব সড়ক পাকা
করা হবে।

প্রথম আলো: বিভিন্ন সড়কের পাশে ময়লার স্তূপ থাকে। সমাধানে কী করছেন?

নাছির উদ্দীন: নগরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তন এসেছে। এখন বাসাবাড়ি ও অফিস-আদালত থেকে সরাসরি বর্জ্য সংগ্রহ করা (ডোর টু ডোর) হয়। এখন দিনের পর দিন ময়লা পড়ে থাকে না। দ্রুত সময়ের মধ্যে বর্জ্য অপসারণ করা হয়। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে চরম সমালোচকও এ বিষয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করতে পারবেন না। তবে নগরবাসীর পরিপূর্ণ সহায়তা পেলে এই কার্যক্রম শতভাগ সফল হবে।

প্রথম আলো: নগরের অনেক এলাকা সড়কবাতির অভাবে অন্ধকার থাকে। এ ব্যাপারে কী করছেন?

নাছির উদ্দীন: ইতিমধ্যে অর্ধেকের বেশি এলাকায় সড়কবাতি স্থাপন করা হয়েছে। আগামী দুই বছরের মধ্যে অন্য এলাকাগুলো আলোকিত করা হবে। এ জন্য মন্ত্রণালয়ে একটি প্রকল্প পাঠানো হয়েছে।

প্রথম আলো: দায়িত্ব পালনকালে কোনো বাধার সম্মুখীন হয়েছেন?

নাছির উদ্দীন: চেয়ারে বসলে বিভিন্ন ধরনের বাধাবিঘ্ন আসবে। তা অতিক্রম করে জনগণের সেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে মূল দায়িত্ব। কে কী করছেন, তা নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই। আমি আত্মসমালোচনার পক্ষে।

প্রথম আলো: সরকার থেকে প্রত্যাশিত সাহায্য পাচ্ছেন? মাঝখানে দূরত্ব ছিল বলে শোনা যায়। তা কি কমেছে?

নাছির উদ্দীন: না, সরকারের সঙ্গে কোনো সময় দূরত্ব ছিল না। শুরু থেকে প্রধানমন্ত্রী ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর কাছ থেকে শতভাগ সহযোগিতা পেয়েছি। এ নিয়ে কোনো আক্ষেপ নেই।

প্রথম আলো: সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বিকাশে করপোরেশন কী পদক্ষেপ নিয়েছে?

নাছির উদ্দীন: সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য থিয়েটার ইনস্টিটিউট নির্মাণ করেছিলেন। শিল্পকলা একাডেমিকেন্দ্রিক সাংস্কৃতিক কর্মীদের সঙ্গে আমার নিয়মিত যোগাযোগ আছে। তাঁদের বিভিন্ন কার্যক্রমে সহায়তা করি। এ ছাড়া মুসলিম হলকে
কেন্দ্র করে সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য সংস্কৃতিমন্ত্রীকে বিভিন্ন সময় অনুরোধ করেছি, চিঠি দিয়েছি। আমার এই উদ্যোগের পর এখন সেখানে ১০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।

প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ।

নাছির উদ্দীন: প্রথম আলোকেও ধন্যবাদ।