সড়ক-মহাসড়ক

প্রতিবছর দুই ঈদের সময় সড়ক-মহাসড়কে যানবাহন চলাচল কয়েক গুণ বেড়ে যায়। ফলে যানজটের সৃষ্টি হয়, মানুষের দুর্ভোগ হয় এবং পণ্য পরিবহনে অনেক সময় অপচয় হয়। তাই ঈদের অনেক আগে থেকেই সংবাদমাধ্যমে এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়, আগাম পরিকল্পনা ও পদক্ষেপের জন্য তাগিদ দেওয়া হয়। গত ঈদুল ফিতরের সময়ও সংবাদমাধ্যম তা করেছে এবং সরকারের সতর্কতা ও আন্তরিক তৎপরতার ফলে ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়া ও ছুটি শেষে ফিরে আসার সময় মানুষের দুর্ভোগ কিছুটা কম হয়েছে।

ঈদুল আজহা এগিয়ে আসছে, ইতিমধ্যে বর্ষা মৌসুমও চলছে। এ দেশে বর্ষাকালে সড়ক-মহাসড়কগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা দ্রুত মেরামত করা না হলে ক্ষতি আরও বাড়তে থাকে। আবার বৃষ্টির কারণে মেরামতের কাজ সহজ হয় না, অনেক সময় মেরামত টেকসইও হয় না। এবার বর্ষা শুরুর বেশ আগেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে এবং তারপর যথারীতি বর্ষা এসেছে। দেশের অনেক এলাকায় একটানা ভারী বৃষ্টি হয়েছে, কিছু এলাকায় বন্যার মতো পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। ফলে বৃষ্টির কারণে সড়ক-মহাসড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ঈদুল আজহায় প্রচুর পশু কোরবানি হয়। এসব পশু পরিবহনের বাড়তি চাপ সড়ক-মহাসড়কগুলোর ওপর পড়ে সেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। যানবাহনের ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত পশু পরিবহন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। মহাসড়ক পুলিশ সদস্যদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, তবে তাঁদের মধ্যে দায়িত্বে অবহেলা কিংবা অনৈতিক প্রবণতা রয়েছে বলে যেসব অভিযোগ পাওয়া যায়, সেগুলো সত্য হলে কোরবানির পশু পরিবহনে বিধিবিধানের প্রয়োগ নিশ্চিত হবে না। ফলে রাস্তাগুলো ভাঙবে, খানাখন্দ সৃষ্টি হবে, বৃষ্টির কারণে সেগুলো ক্রমেই আরও বড় হতে থাকবে এবং একটা সময়ে সড়ক-মহাসড়ক ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়তে পারে। কোরবানির পশু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পথে পথে চাঁদা বা টোল আদায় করা হয় বলে যে অভিযোগ পাওয়া যায়, তাও বন্ধ করা দরকার।

গত ঈদুল ফিতরের আগে সড়ক-মহাসড়কের ক্ষতিগ্রস্ত অংশগুলো মেরামতের কাজ হয়েছে; এখনো বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কের নানা অংশে সংস্কার বা মেরামতের কাজ চলছে। ঈদুল আজহার আগেই যেসব কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব সেগুলো সম্পন্ন করা উচিত এবং সংস্কার যেন টেকসই হয় তা নিশ্চিত করতে কাজের গুণগত মান নিশ্চিত করা দরকার। সড়ক নির্মাণ ও মেরামতের ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ ব্যাপক। দুর্নীতির ফলে কাজের মান খারাপ হয় এবং মেরামত করা সড়ক অল্প দিনের মধ্যেই আবার ভেঙে যায়, খানাখন্দে ভরে ওঠে। এই ক্ষেত্রে জবাবদিহি বাড়ানোর উদ্যোগ অবশ্যই নিতে হবে। দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ এবং শাস্তি নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিতে হবে। এটা শুধু ঈদ মৌসুমের জন্য নয়, সারা বছর দেশের সব সড়ক-মহাসড়ক চলাচলের উপযোগী রাখার স্বার্থেই এটা করা দরকার।

ঈদের সময় রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের সব অংশের যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত সড়ক-মহাসড়কগুলোর ওপরেই সবচেয়ে বেশি চাপ পড়ে। এদিকে লক্ষ রেখে এসব সড়ক-মহাসড়কে যানবাহন চলাচলে শৃঙ্খলা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। হাইওয়ে পুলিশ গত ঈদুল ফিতরের সময় এ বিষয়ে সতর্ক ছিল বলে যাত্রীসাধারণের দুর্ভোগ কম হয়েছে। আমরা আশা করব, তারা আসন্ন ঈদুল আজহায়ও একই রকমের আন্তরিকতা ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবে। অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন, ফিটনেসহীন যানবাহন চালানো, বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চালানো—এসব নেতিবাচক প্রবণতা কঠোরভাবে দমন করা দরকার।