আমরা উদ্বিগ্ন, উৎকণ্ঠিত

সড়ক দুর্ঘটনায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যুর পর সহপাঠী শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে বিপুল আবেগ ও প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা গেছে, তা দেশের প্রতিটি মানুষকে স্পর্শ করেছে। নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির প্রতিও সর্বস্তরের মানুষ একাত্মতা প্রকাশ করেছে। এমনকি সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে মন্ত্রী-নেতারাও ছাত্রদের আন্দোলনকে ন্যায্য ও যৌক্তিক বলে অভিহিত করেছেন।

এদিকে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিভিন্ন সড়কে গাড়ির কাগজপত্র পরীক্ষা করার উদ্যোগ নিলে জনগণ তাকেও সর্বতোভাবে স্বাগত জানিয়েছে। পুলিশ বাহিনীর সদস্যরাও তাদের এই কাজে সক্রিয়ভাবে সহায়তা করেছেন, যা গণমাধ্যমের খবরেও এসেছে। কিন্তু ছাত্রদের তদারকিতে সড়ক পরিবহনের যে সীমাহীন বিশৃঙ্খলা ও অনিয়ম বেরিয়ে এসেছে, তা ভয়াবহ বললেও কম বলা হয়। বেসরকারি যানবাহনের পাশাপাশি অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠানের যানবাহনেও বৈধ কাগজপত্র না পাওয়া খুবই দুর্ভাগ্যজনক।

দেশবাসী আশা করেছিল শিক্ষার্থীদের এই কার্যক্রম শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হবে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে তা হয়নি। সড়ক পরিবহন শ্রমিক ও মালিকেরা ছাত্রদের এই মহতী উদ্যোগের পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে সারা দেশে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন। তাঁরা অজুহাত হিসেবে নিরাপত্তার দোহাই দিয়েছেন। প্রকৃত সত্য হলো এর চেয়ে অস্বাভাবিক ও সংঘাতময় পরিস্থিতিতেও তাঁরা যানবাহন চালিয়েছেন। সড়ক পরিবহন মালিক ও শ্রমিকেরা প্রথমে আন্তজেলা বাস চলাচল বন্ধ রেখেছিলেন। পরে  অনেক স্থানে পণ্য পরিবহনও বন্ধ করে দেন। এ অবস্থায় জনজীবন শুধু নিশ্চল হয়ে পড়েনি, দেশের অর্থনীতিতেও মারাত্মক বিরূপ প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। 

উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার এখানেই শেষ নয়। গত দুদিনে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও মিছিলে একশ্রেণির যুবক হামলা করলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়। সরকারি দলের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের ছত্রচ্ছায়াতেই যে এসব আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে তা পরিষ্কার। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরাও প্রতিরোধের চেষ্টা করলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে আহত বেশ কয়েকজনকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। জনজীবনে উৎকণ্ঠার সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে নানা গুজবও, যা পরিস্থিতি আরও নাজুক করে তুলতে পারে। গত শনিবার সংঘাতের ঘটনাটি পিলখানা-জিগাতলা এলাকায় সীমিত থাকলেও গতকাল রোববার আরও কয়েকটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এতে দেশবাসীর সঙ্গে আমরাও উদ্বিগ্ন। উৎকণ্ঠিত।

আমরা মনে করি, সংঘাত বা বলপ্রয়োগ কোনো সমাধান দেবে না। শান্তিপূর্ণ উপায়েই শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের অবসান ঘটাতে হবে। সরকার যখন স্বীকার করছে শিক্ষার্থীদের দাবি ন্যায্য ও সংগত, তাহলে তা বাস্তবায়নে বাধা কোথায়? দাবিনামা পূরণ করা হবে, এটি মুখে বললেই হবে না, সরকারকে এখনই এমন কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে, যা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করতে পারে।

এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে আছে। শিক্ষার্থীরা যত বেশি দিন রাস্তায় থাকবে, পরিস্থিতি তত জটিল ও কঠিন হয়ে পড়বে। সে ধরনের পরিস্থিতি কোনোভাবে কাম্য হতে পারে না। সরকারের দাবি, শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঢুকে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি অরাজক অবস্থার সৃষ্টি করেছে। কারা কীভাবে করছে সেটি জনগণকে জানানো হোক। কিন্তু আন্দোলনের ভেতরে অনুপ্রবেশকারী ঢুকেছে, এই অজুহাতে শিক্ষার্থীদের ওপর সরকারদলীয় কোনো সংগঠনের কর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারেন না। যেখানে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকেরা সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রেখে জনজীবন দুর্বিষহ করে তুলেছেন, সেখানে সরকার নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করবে, সেটিও হতে পারে না।

আমরা আশা করব শিক্ষার্থীদের ঘরে ফেরাতে সরকার দ্রুত কিছু কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। সড়কে ও শিক্ষাঙ্গনে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসুক।