বেইলি সেতু ভেঙে খালে

যে বেইলি সেতুর ধারণক্ষমতা সর্বোচ্চ ২০ টন, সেটার ওপর দিয়ে যদি ২৭ টন ওজনের ট্রাক চলাচল করে আর সেতুটি যদি জরাজীর্ণ থাকে, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই সেটি ভেঙে পড়ার কথা। পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার তুষখালী এলাকায় গত শুক্রবার রাতে ঠিক তা-ই ঘটেছে। খননযন্ত্রবোঝাই একটি ট্রাক বেইলি সেতুটি পার হওয়ার সময় তা ভেঙে খালে পড়ে যায়। সেতুটি ভেঙে যাওয়ায় মঠবাড়িয়া ও বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার সঙ্গে ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা, বেনাপোল, পিরোজপুরসহ ১২টি স্থানের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

গত কয়েক বছর এই ধরনের বেশ কিছু দুর্ঘটনা ঘটেছে। গত বছরের আগস্টে পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী-পাথরঘাটা সড়কের মাদারসী বেইলি সেতু ভেঙে পড়ে। একই বছর টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারে একটি বেইলি সেতুর ওপর দিয়ে ৩৫ টনের একটি ট্রাক উঠে পড়লে ট্রাকসহ ব্রিজটি ভেঙে পড়ে। ২০১৫ সালে কাউখালী-চট্টগ্রাম সড়কের বেতছড়ি এলাকায় একটি বেইলি সেতুর পাটাতন ভেঙে পড়ে। এতে কাউখালী-চট্টগ্রাম ও রাঙামাটির মধ্যে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। এভাবে একের পর এক বেইলি সেতু ভেঙে পড়ছে। অথচ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো মাথাব্যথা নেই।

বেইলি সেতু ভেঙে পড়ার একাধিক কারণ রয়েছে। বেইলি সেতুতে ভারী যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানা হয় না। অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে ভালো মানের বেইলি সেতু তৈরি করা যায়নি অনেক স্থানেই। এ ছাড়া বেশির ভাগ বেইলি সেতুই মেয়াদোত্তীর্ণ ও জরাজীর্ণ। তিন থেকে পাঁচ বছর পরপর সংস্কারের কথা থাকলেও তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা করা হয় না। ফলে সেগুলো ভেঙে পড়ছে সহজেই।

প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, মঠবাড়িয়ার তুষখালী এলাকার ভেঙে পড়া সেতুটি ১৯৯৫ সালে নির্মাণ করা হয়েছিল এবং দীর্ঘ ২৩ বছরে বড় ধরনের কোনো সংস্কার হয়নি। ফলে এটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছিল। পিরোজপুরে আরও ১৮টি বেইলি সেতু রয়েছে, যেগুলো সংস্কারের অভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সালের বন্যার সময় বহু স্থানে সেতু-কালভার্ট ভেঙে যায়। তখন সেসব জায়গায় বেইলি সেতু স্থাপন করে সাময়িক যোগাযোগের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। পরে আরও অনেক স্থানে বেইলি সেতু নির্মাণ করা হয়। সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের সূত্রমতে, দেশের সড়ক-মহাসড়কে ৪ হাজার ৪০৪টি সেতুর মধ্যে ৮৫৬টি হচ্ছে বেইলি সেতু। ইস্পাতের তৈরি এসব সেতু হালকা হয়ে থাকে। ভারী যানবাহন চলার জন্য এ ধরনের সেতু মোটেই উপযুক্ত নয়। তাই এখন উচিত বেইলি সেতুর জায়গায় কংক্রিটের সেতু নির্মাণ করা। কেননা, কংক্রিটের সেতু অবকাঠামোগত দিক থেকে অনেক বেশি টেকসই হয়। সরকারের উচিত বিষয়টিতে গুরুত্বের সঙ্গে নজর দেওয়া।