সাগরে জলদস্যুদের দাপট

সাগরে দুর্বৃত্ত, অনুপ্রবেশকারী ও জলদস্যুদের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে জলদস্যুরা এখন জেলেদের জন্য মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছে। এক মাস ধরে একের পর এক জেলেদের অপহরণ করে মুক্তিপণ চাওয়া হচ্ছে। দিতে না পারলে তাঁদের মেরে ফেলা হচ্ছে। তাঁদের নিরাপত্তা দিতে উপকূলীয় বাহিনী ব্যর্থ হচ্ছে। সব মিলিয়ে সেখানকার পরিস্থিতি হতাশাজনক। চট্টগ্রামের বাঁশখালী-সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, জলদস্যুরা জেলেদের অপহরণ করে প্রকাশ্যে এসে মুক্তিপণ চাচ্ছে। মুক্তিপণ না পেলে তারা অপহৃত ব্যক্তিদের মেরে ফেলছে। এই জেলেদের নিরাপত্তা দেওয়ার কেউ নেই।

পত্রিকার খবর অনুযায়ী, গত এক মাসে বাঁশখালী থেকে নিখোঁজ হয়েছেন ২০ জেলে। এলাকাবাসীর ধারণা, জলদস্যুরা তাঁদের হত্যা করেছে। এর আগে ২০১৩ সালের ২ এপ্রিল ৩২ জন জেলেকে হত্যা করে লাশ সাগরে ফেলে দিয়েছিল জলদস্যুরা।

আমাদের ভাবা দরকার, প্রাণ হাতে নিয়ে যাঁরা উত্তাল সাগরে মাছ ধরতে যান, তাঁরা কারা? তাঁরা হতদরিদ্র জেলে। স্রেফ পেটের তাগিদে, নিরন্ন বউ-বাচ্চার মুখে দুবেলা দুমুঠো ভাত তুলে দিতে জীবন হাতে নিয়ে তাঁরা যান। প্রতি মুহূর্তে তাঁদের সামনে মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে। মাঝদরিয়ার তুফান যেকোনো সময় তাঁদের গ্রাস করতে পারে, সেই ভয় তাঁরা পায়ে মাড়িয়ে দেশের মানুষের মৎস্যের চাহিদা পূরণ করতে সাগরে যান।

কিন্তু বৈরী আবহাওয়া আর সাগর যতটা না ভয়ংকর, তার চেয়ে অনেক বেশি ভয়ংকর মানুষ। মানুষের মতো দেখতে এই অমানুষগুলো হলো জলদস্যু। তারা সশস্ত্র হামলা চালিয়ে জেলেদের নৌকা দখল করে নেয়। মাছ লুটে নিয়ে তাঁদের জিম্মি করে। মাঝি-মাল্লাসহ একেকটি নৌকার মুক্তিপণ হিসেবে লাখ লাখ টাকা দাবি করে। টাকা দিলে হয়তো মুক্তি মেলে। না দিলে সব জেলের নিশ্চিত মৃত্যু।

এ অবস্থা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। সাগরের সব খবর ডাঙা পর্যন্ত পৌঁছাতেও পারে না। হতভাগ্য মানুষগুলো কালের গলিত গর্ভে হারিয়ে যাওয়ার মতো নীল দরিয়ায় নিখোঁজ হয়ে যান। অথচ উপকূলের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে কোস্টগার্ডের মতো শক্তিশালী বাহিনী রয়েছে।
প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, বোটমালিকেরা বলছেন, কোস্টগার্ডকে বলার পরও কোনো প্রতিকার হচ্ছে না। আর কোস্টগার্ডের ভাষ্য, বিষয়টি তাদের জানা নেই।

কোস্টগার্ড না জানলেও বাঁশখালীর জেলে ও নৌকার মালিকেরা বলছেন, কুতুবদিয়ার উপকূল এলাকা, বিশেষ করে রিমশাখালী, দুরুমবাজার এলাকা জলদস্যুদের মূল আস্তানা। তারা নিয়মিত বোট আটকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তাদের ঠেকানো যাচ্ছে না।

এ অবস্থায় দায়িত্বরত কোস্টগার্ডের যদি বিষয়টি জানার বাইরে থাকে, তবে সাধারণ জেলেরা কোথায় যাবেন? তাঁদের নিরাপত্তা কে নিশ্চিত করবে?