সিইসির স্বীকারোক্তি

দেড় মাস ছুটি কাটিয়ে দেশে ফিরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ যে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন, তাতে তাঁর এই সাংবিধানিক পদটির মর্যাদা মোটেই বাড়েনি বলে আমরা ধারণা করি। গত বুধবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সিইসি বলেছেন, ‘যেটা হয়েছে, তা আমি থাকলেও হতো, না থাকলেও হতো।’ এসব কথার মধ্য দিয়ে তিনি যেমন নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন, তেমনি সাংবিধানিক দায়িত্ব এড়িয়ে গেছেন।
নির্বাচনে জালিয়াতি কিংবা সহিংসতা ঠেকানো যদি নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দায়িত্ব না হয়ে থাকে, তাহলে কার দায়িত্ব? নির্বাচনের সময় জনপ্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ইসির কাছে দায়বদ্ধ এবং তাদের নির্দেশনা মানতে বাধ্য।
সিইসি কৈফিয়তের সুরে বলেছেন, কেউ যদি কারও মাথায় লাঠি মারে, সেটা তো আগে থেকে বলা যাবে না। কিন্তু নির্বাচনের সময় ব্যক্তি বা গোষ্ঠীবিশেষ যাতে লাঠি মারতে কিংবা আইন নিজের হাতে তুলে নিতে না পারে, সেই পরিবেশটি তৈরির দায়িত্ব কি নির্বাচন কমিশনের নয়?
রাজনৈতিক দলগুলোর সমালোচনার জবাবে সিইসি বলেছেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন কমিশনকে আদর করবে না। লেজে পা পড়লে তো সমালোচনা করবেই।’ তিনি লেজে কার পা পড়ার কথা বলেছেন, যাঁরা সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন চান, নাকি যাঁরা ভোটকেন্দ্র দখলের উৎসবে মেতে ওঠেন?
নির্বাচন কমিশন তথা সিইসির দায়িত্ব হলো সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করা। সদ্যসমাপ্ত উপজেলা নির্বাচনে সেই কাজটুকু তারা করতে পারেনি বলেই এত সমালোচনা হচ্ছে। আর ভোট জালিয়াতি বন্ধ এবং ভোটারদের নিরাপত্তার দায়িত্বই যদি তিনি না নেবেন, তাহলে পদ আঁকড়ে রাখারই বা যৌক্তিকতা কী? সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে লোকবলের চেয়েও ইসির বড় শক্তি জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস। সে ক্ষেত্রে ইসির কোনো দায়িত্বশীল কর্মকর্তার এ ধরনের দায়িত্বহীন কথাবার্তা বলা উচিত নয়।
একই সময়ে প্রতিবেশী ভারতেও নির্বাচন হচ্ছে। সে দেশের ইসি কীভাবে নির্বাচন পরিচালনা করে, কীভাবে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর কর্তৃত্ব করে, তা থেকে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন তথা সিইসি শিক্ষা নিতে পারেন।